একদিকে মৃত্যুর ভয়, অন্যদিকে বসতভিটা ছাড়ার ভয়। এ নিয়ে সীতাকুণ্ড পাহাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। পাহাড় ধসের সম্ভাবনা এবং মৃত্যুর ভয় থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ি এলাকাগুলো থেকে বসতিভিটা ছাড়ে না ওরা। অপরাগতা প্রকাশ করছে। জানা গেছে, গত শনি ও রবিবারের টানা বৃষ্টিতে যে কোনো সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুইদিন ধরে কয়েক দফা মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এতে কেউ কর্ণপাত করছে না। তারা বসতি ছেড়ে কোথায় উঠবে তাও নিশ্চিত হতে পারছে না। একদিকে মৃত্যুর ভয় অন্যদিকে বসতভিটা ছাড়ার ভয়। উপজেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, কুমিরা, সোনাইছড়ি পার্বত্য এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী পরিবার বসবাস করছে। তারা পাহাড়ের টিলায় ও ঢালুতে বসতি স্থাপন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে। উপজেলা প্রশাসন বর্ষায় মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও এরা পাহাড় থেকে সরতে চায় না। তাদের অভিযোগ কেবল ভারী বৃষ্টি শুরু হলে উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করেই দায় সারে। তাদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ প্রশাসন নিচ্ছে না।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, তাঁর ইউনিয়নে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত ৬৫টি ত্রিপুরা পরিবারই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ সব পরিবারকে সমতলে পুনর্বাসন করা দরকার।
চারটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢাল কেটে টিন, শণ ও বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকছে লোকজন। আবার কোথাও মাটির দেয়াল দিয়েও ঘর তৈরি করে থাকছে অনেকে। তাছাড়া ইউনিয়ন বা পৌরসভাভিত্তিক পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে পুণর্বাসন করারও কোনো সরকারি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।
কুমিরা এলাকার রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমরা যাবো কোথায়? জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, সাগরের জোয়ারে বাড়িঘর সব নিয়ে গেছে। তারপর থেকেই পাহাড়েই ঠাঁই নিয়েছি। পাহাড় ভাঙি পড়লেও এ্যানেই আঁরার থাকতে অইবো। এটাই আরাঁর জীবন। ছোট কুমিরা পাহাড়ে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম ও জয়নাল জানান, এলাকায় তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই, তারা যাবেন কোথায়?
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন, পৌরসভা, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ে ৯৭৩ জন ত্রিপুরা, ১২৬ জন চাকমা, ১৫০ জন মারমা, অন্য নৃ-গোষ্ঠীর ১৭০ জন বাস করছে।
দক্ষিণ সোনাইছড়ি পাহাড়ের বাসিন্দা কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড় ধসে প্রাণ গেলেও কী করার আছে? সরকার যত দিন ভূমির ব্যবস্থা করবে না, তত দিন ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হবে।’
গতকাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে যেকোনো সময় পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই শনিবার ও রোববার মাইকিং করা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।