মৃত্যুর কাছ থেকে ফেরা ১২ নাবিক ও জেলের কথা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

একটি বাঁশ এবং কয়েকটি ফ্লোটিং বল নিয়ে গভীর সাগরে ভেসেছিলেন তারা। কখনো কল্পনা করেননি বেঁচে ফিরতে পারবেন। অথৈ সাগরে ভাসার সময় কয়েকজন বাঁশ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্যরা আবার তাদের বাঁশ ধরে ভাসতে উৎসাহিত করেছেন। মৃত্যুর হাতছানির মাঝে তারা জীবন ফিরে পেয়েছেন বলে জানালেন সাগরে ডুবে যাওয়া এফভি কৌশিকের ১২ নাবিক ও জেলে। গতকাল তারা পতেঙ্গার কোস্ট গার্ড জেটিতে নেমে আনন্দে কান্না করছিলেন।

এফভি কৌশিকের মাস্টার মোহাম্মদ শরীফ মিয়া গতকাল পতেঙ্গার কোস্ট গার্ড জেটিতে বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর মহীপুর থেকে তিনি অপর ১২ জেলেসহ সাগরে মাছ ধরতে যান। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর রাতে প্রকৃতি বিরূপ হয়ে ওঠে। সাগর হয়ে ওঠে উত্তাল। ওইদিন রাত ১০টার দিকে কুয়াকাটার দক্ষিণপশ্চিমে গভীর সাগরে তাদের জাহাজটি ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। জাহাজের ১৩ জনের মধ্যে একজন নিখোঁজ হলেও আমরা বাকি ১২ জন একটি বাঁশের সাথে ফ্লোটিং বল বেঁধে রেখে ভাসতে থাকি। একদিন পানিতে ভাসতে থাকার পর ভারতের কাকদ্বীপ এলাকায় ভারতীয় একটি ফিশিং বোটের জেলেরা আমাদেরকে উদ্ধার করে। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর বিকালে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে খবরটি দিয়েছিল। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় কোস্ট গার্ড সেখানে যেতে পারেনি।

মানিক নামের একজন জেলে জানান, আমাদেরকে উদ্ধার করার পর ভারতীয় জেলেরা টানা প্রায় ৮ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার তীরে যান। সেখানে স্থানীয় পাথর প্রতিমা থানায় জেলেরা আমাদেরকে উদ্ধার করার বিষয়টি জানান। পুলিশ পরদিন আমাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তখন থেকে আমরা কারাগারেই আটক ছিলাম।

কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্য বন্দি ও কারা কর্তৃপক্ষের সহানুভূতি পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কীভাবে বেঁচে ফিরেছি, সেটা জেলারকে বলেছি। এক জজ কারাগারে ভিজিটে গিয়েছিলেন। কারাগার থেকে আমাদের বিষয়টি তাকে জানানোর পর তিনি আমাদের সাথে কথা বলেছিলেন।

১৩ ডিসেম্বর কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে একজন কর্মকর্তা গিয়ে কারাগারে আমাদের সাথে কথা বলেন। তিনি আমাদেরকে পরিবারের সাথে কথা বলিয়ে দেন। প্রায় তিন মাস পর পরিবারের সাথে ওইদিন আমরা প্রথম কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম।

তারা জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর আমরা মুক্তি পাই। মুক্তির পর ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা ১২ জন ভারতীয় কোস্ট গার্ডের কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম। ৫ জানুয়ারি বিকালে আমাদেরকে গভীর সাগরে এনে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসি রোড এলাকায় ওয়াসার পানিতে ‘ময়লা-দুর্গন্ধ’
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচলাইশ থানার সাবেক ওসি নাজিমসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ