মৃগীরোগ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা নয়, দরকার সচেতনতা

চমেক হাসপাতাল নিউরোলজি বিভাগে রোগীরা পাচ্ছে সেবা । বিশ্ব মৃগী রোগ দিবস আজ

জাহেদুল কবির | সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মৃগীরোগ নিয়ে সমাজে এখনো অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। রাস্তাঘাটে কোনো মৃগী রোগীর খিঁচুনি শুরু হলে তাকে চামড়ার জুতা শুঁকানো হয়। সবার বদ্ধমূল ধারণা, এতে মৃগী রোগীর খিঁচুনি দ্রুত কমে যাবে। চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত মৃগী রোগীর খিঁচুনি এক থেকে দুই মিনিট স্থায়ী হয়। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। খিঁচুনির সময় রোগী যেহেতু অজ্ঞান হয়ে যায়, তাই প্রথম কাজ হচ্ছে, নিরাপদ স্থানে রোগীকে সরিয়ে নিতে হবে। মাথার নিচে ভাঁজ করে কাপড় দিতে হবে, যাতে মাথায় আঘাত না লাগে। এছাড়া চশমা থাকলে খুলে ফেলতে হবে। পরনের আঁটসাঁট পোশাক ঢিলে করে দিতে হবে এবং রোগীকে এক পাশে কাত করে শোয়াতে হবে। প্রথমবার খিঁচুনি হলে সাধারণত চিকিৎসকরা ওষুধ দেন না। দ্বিতীয়বার খিঁচুনি হলে ইলেক্ট্রোএনসাফালোগ্রাফি (ইইজি), সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে ওষুধ দেন। তবে ওষুধ শুরুর আগে রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে জানানো উচিত। কারণ এই রোগ নিয়ে অনেকের বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার রয়েছে। রোগীকে বোঝাতে হবে এটি একটি স্বাভাবিক রোগ।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) নিউরোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নিউরোলজি ওয়ার্ডে মৃগীজনিত খিঁচুনিসহ আরো বিভিন্ন খিঁচুনির সমস্যায় প্রায় ৬০০ রোগী ভর্তি ছিলেন। নিউরোলজি বিভাগে প্রতি রোববার এপিলেপ্সি ক্লিনিক বা মৃগী রোগ ক্লিনিকের বহির্বিভাগে মৃগী রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। বিগত বছর এই ক্লিনিকে সেবা নিয়েছেন প্রায় ২৫০ রোগী। বর্তমানে মৃগী রোগীদের রোগ নির্ণয়ের অন্যতম ইইজি পরীক্ষা নিউরোলজি বিভাগে হচ্ছে। তবে ইলেক্ট্রোএনসাফালোগ্রাফার (ইইজি টেকনিশিয়ান) না থাকায় আপাতত কেবল প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের শেখানোর উদ্দেশ্যে সীমিত সংখ্যক রোগীকে ইইজি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডে স্থান সংকুলানের অভাবে মৃগী রোগীদের জন্য আলাদা মৃগীরোগ ব্লক বা ইউনিট স্থাপন করাও সম্ভব হয়নি।

নিউরোলজি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড রয়েছে ৯০টি। তবে প্রায় প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে। ওয়ার্ডের ভিতরের বেড ও মেঝে ছাড়িয়ে এখন গেটের বাইরে সিঁড়ির পাশের করিডোরেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রাতের বেলায় নারী চিকিৎসকদের সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গেটে দায়িত্বরত আনসার থাকে ওয়ার্ডের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য। মেঝেতে রোগী থাকার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা রাউন্ডে রোগীদের ফলোআপ করতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়। এছাড়া গেটের বাইরে রোগীদের জরুরি প্রয়োজনের অঙিজেন দেওয়াও যায় না।

চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুজ্জামান আজাদীকে বলেন, মৃগী রোগ নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। শুধুমাত্র রোগের ইতিহাস এবং খিঁচুনির ভিডিও দেখে কোনো রকম দামী পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। ৯০ শতাংশ রোগী ওষুধ খেয়ে ভালো থাকে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ২ থেকে ৫ বছর ওষুধ খেয়ে রোগমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। এছাড়া মৃগীরোগে আক্রান্ত নারীরা গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালীন নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে সুস্থ থাকতে পারবেন এবং সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে পারবেন। মৃগী রোগের ক্ষেত্রে কোনো বৈদ্য কবিরাজের কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁক না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীর পরিবারের লোকদেরও সচেতন হতে হবে।

আজ বিশ্ব মৃগীরোগ দিবস: আজ বিশ্ব মৃগী রোগ দিবস। এ উপলক্ষে চমেকের নিউ কনফারেন্স হলে বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও র‌্যালির আয়োজন করেছে চমেক হাসপাতাল নিউরোলজি বিভাগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুড়িশ্চর মাদ্রাসায় হামলার প্রতিবাদী মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধকোতোয়ালী থানার সামনে দেড় ঘণ্টা সড়ক অবেরোধ