মূল্যস্ফীতি কমবে মে নাগাদ, আশা অর্থ উপদেষ্টার

| বুধবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলোর সুফল আগামী মে মাস নাগাদ মিলতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, রোজার সময় একটা মেজর পরিকল্পনা নেব। সেটার ফলটা এপ্রিলমে মাসের দিকে পাওয়া যাবে। আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন যে পদক্ষেপগুলো নেব, সেটার ফল আসবে এপ্রিলে। জুন মাসের দিকে যেটাকে আপনার আইডিয়াল সিচুয়েশন বলছেন, ৬ কিংবা ৭ শতাংশের দিকে যেতে পারে। আমার পক্ষ থেকে বলছি যে, মার্চের দিকে স্পেসিফিক কতগুলো অ্যাকশন দেখবেন। বিশেষ করে আর্থিক খাতকে সামনে রেখে।

গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আমদানির ফলসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় গত মাসে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। এর প্রতিবাদে গতকাল থেকে ফল খালাস বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। খবর বিডিনিউজের।

এক সাংবাদিক জানতে চান, ব্যবসায়ীরা ফল আমদানি বন্ধের হুমকি দিয়েছে, দামও বেড়েছে তিন গুণ। মানুষের হাহাকার লেগে যাচ্ছে; এটা অনুভব করেন কিনা? উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, আমি ফিল করি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অনেক ম্যাগনিফাই করে বলে। যখন বাজেট তৈরি করব, তখন ভ্যাট নিয়ে একটা কমপ্রিহেনসিভ ব্যবস্থা নেব। এখন তো এসআরও জারি করে ভ্যাটটা করছি। মূল উদ্দেশ্য ছিল এক্সামশন থেকে বেরিয়ে আসা। বহুলোক দিনের পর দিন বহুরকম এক্সামশন ভোগ করছিল। এর মধ্যে হয়তো দুইএকটা পণ্য আক্রান্ত হয়েছে। সেটা আমরা চেষ্টা করব যথাসম্ভব লাঘব করার। তিনি বলেন, আপাতত আমাদের মেইন কনসার্ন হলো মূল্যস্ফীতিটা যতটা সম্ভব, যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনা। সাথে সাথে আয়ের উৎসটা বাড়ানো। কীভাবে বেসরকারি খাতে অর্থায়ন প্রবাহটা বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করেছি।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি হলে শ্রীলঙ্কাকে খুঁজে পাওয়া যেত না : অর্থনীতির নিরিখে রাজাপাকসের শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের তুলনায় আপত্তি রয়েছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিনের। তিনি বলেন, অনেকে আবার শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করে। টকশোতে আমি বহু কিছু দেখি। শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশ এক নয়। বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি হলে শ্রীলঙ্কাকে খুঁজেই পাওয়া যেত না। এখন আমাদের ১২টা ব্যাংক ফাংশনালি ইফেক্টিভ। ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে বাকি ব্যাংকগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বিশ্বের কোনো দেশে এ রকম হয়েছে?

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এক তৃতীয়াংশ ব্যাংক কাজ করে না। বাংলাদেশের তুলনায় শ্রীলঙ্কা ছিল আরও স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে (অ্যা লিটলবিট ইজিয়ার)। সেখানে এতো কনফ্লিক্ট ছিল না। সেখানে এতো চ্যালেঞ্জ ছিল না। ওখানে যে গভর্মেন্টই আসে তাদেরকে সাপোর্ট করা হতো। এখানে তো অনেক চ্যালেঞ্জ। অনেকে আমাদের পছন্দ করে না, বলে, চলে যান। এই সেই বলছে। এর মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে অনিয়মের কারণে দেশের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়েছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা যদি কাউন্টার পদক্ষেপগুলো না নিতাম, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা কিন্তু অকল্পনীয় অবস্থায় চলে যেত। কোথাও কোনো অর্থ নেই। সব ব্যাংক থেকে অর্থ চলে গেছে। ক্যান ইউ ইমাজিন! পৃথিবীর কোনো দেশে এমন হয়েছে? আমানতকারীর টাকাসহ নিয়ে গেছে। সাধারণত পরিচালকদের টাকা নিয়ে যায়, দিয়ে যায়। এখন তো টাকাই নেই। আমরা সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে দিচ্ছি। এখন প্ল্যান করছি কীভাবে স্পেশাল ফান্ড করে সিএসএমইকে দেওয়া যায় বা অন্যদের দেওয়া যায়।

রাশেদ মাকসুদ প্রসঙ্গ : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। তাদের ভাষ্য, এনআরবিসি ব্যাংকের অর্থ লোপাটের সঙ্গে ছিলেন রাশেদ। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেগুলো তারা বলুক। আমিও জানি। একেকজন একেক পার্সপেক্টিভে বলবে। যারা লস করেছে তাদের প্রতি অবশ্যই সিম্প্যাথি আছে। কিন্তু সেটা নতুন চেয়ারম্যানের কারণে না। আগে যাদেরকে দেখেছেন, যেসব চেয়ারম্যান, তারা যেভাবে টাকা নিয়েছে আরকি। সুকুক বন্ডের মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। এজন্য আমি বলছি যে, আমরা চেষ্টা করব। শেয়ার মার্কেট অনেকটুকু উঠেছে। চুরিদারি ধরা পড়ার পর অনেক নেমে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধজানুয়ারি মাসে সড়কে প্রাণ গেল ৬০৮ জনের