দেখতে দেখতেই এক ভয়ঙ্কর অনিরাপদ সীমানায় পৌঁছে যাচ্ছি আমরা। এ যেন রুদ্রতার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ! কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? কীভাবে হচ্ছে? রোধ করা যাচ্ছে না কেন? আদৌ কি রোধ করা যাবে?
প্রকৃতির দৃশ্যমান লীলায় কিছুই অপ্রতিরোধ্য নয়। গতি যার আছে, আছে তার প্রতিরোধকও। এক্ষেত্রে কেবল ধৃতি দরকার। বুঝতে পারতে হবে প্রকৃতির চরিত্রকে। সে কখন কীভাবে তার গতি বদলায় কিংবা চরিত্রে বদল আনে তা বুঝতে পারা চাই। এটার জন্য যা দরকার তা বেমালুম এড়িয়ে যাচ্ছে সমাজ, সচেতন বা অবচেতনভাবে।
ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠী সমপ্রদায়ের কৃত্রিম একটা বিভাজনরেখা বেশ পোক্তভাবেই সেঁটে গেছে সমাজের ক্যানভাসে। বৈপরীত্য বা বৈচিত্র্য খারাপ তো নয়–ই, বরং মঙ্গল; কিন্তু সেই বৈপরীত্যের আবহটাই যখন বিপরীত হয়ে ওঠে তখনই বিপত্তি ঘটে সমাজদেহের রক্তসঞ্চালনে। নির্মমভাবে সত্য যে আজকের বাঙলাদেশ বৈপরীত্যের ঐক্য থেকে জীবনযাত্রার শক্তি সংগ্রহ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হতে চলেছে। বিভেদ, বিদ্বেষ, হিংসার বীজ হয়ে গেছে উচ্চফলনশীল শস্য সমারোহের মতো। কেউ কারও মতামতকে সহ্য তো করছেই না, সমীহও করছে না। ‘আমার মত–ই উন্নত, আমার ধর্ম–ই শ্রেষ্ঠ, আমরাই অভিজাত, বাকিগুলো সব উচ্ছিষ্ট অপাংক্তেয়!’ – এই গোঁয়ার্তুমি ক্রমশ পশ্চাৎপদ করে দিচ্ছে আমাদের।
মননের পশ্চাৎপদতা আমাদেরকে সামাজিকভাবে অনিরাপদ করে তুলছে। কেবলই পেশিশক্তি আর সংখ্যাগুরুতার নিকৃষ্ট অহম অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে জনপদ। এ অন্ধকার শিক্ষা –সাহিত্য –শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করছে। শিল্পের বিকাশ না ঘটলে অশিল্প কিংবা অপশিল্পের বেড়ে ওঠে আগাছার মতো। এটাই ঘটে চলেছে এই গাঙ্গেয় বদ্বীপে আর সামাজিক নিরাপত্তা বলয় ভাঙতে ভাঙতে আমরা ঢুকে যেতে বসেছি মধ্যযুগীয় আদিমতার ভয়াবহ গহব্বরে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়কে অক্ষুণ্ন রেখে টেকসই বিনির্মিতি দেয়ার জন্য শৈল্পিক মননচর্চার বিকল্প নেই।












