দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র চাতরী চৌমুহনী বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় গুড়িয়ে দেয়া হয় শতাধিক অবৈধ ভাসমান দোকান। সরানো হয়েছে অবৈধ টেক্সি স্ট্যান্ড। ফলে চিরচেনা যানজটে ঠাসা চৌমুহনী বাজার ফিরেছে অন্য রূপে। সড়কের উপর তৈরি করা অবৈধ দোকানপাট, ভাসমান দোকান উচ্ছেদ, বাজারের প্রধান সড়কে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ময়লা সরাতে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালায় আনোয়ারা থানা পুলিশ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আনোয়ারা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহানুর রহমান সোহাগ ও আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করেন কোরিান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্তৃপক্ষ, সওজ ও চাতরি চৌমহনী বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। তবে স্থানীয়রা অঘোষিত ট্রাফিক বাণিজ্যে নিয়োজিত সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অভিযান পরিচালনার পর চাতরি চৌমহনী বাজার যানজট মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অন্যরকম এক সুন্দর বাজারে রূপ নিতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও স্থানীয়রা পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি এই সিন্ডিকেট যাতে আবারো অপতৎপরতা চালিয়ে বাজারের সড়কের উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও সড়ক দখল করে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে সেই ব্যাপারে কঠোর নজরদারীর দাবি জানানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, সড়কে ভাসমান দোকান ও অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে প্রতিদিন যানজট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি কোরিয়ান কেইপিজেড ছুটির পর সন্ধ্যায় শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের চাপ বেড়ে গেলে পকেটমার, মোবাইল ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা বেড়ে যেত। এই অভিযানের ফলে বিভিন্ন অপরাধ অনেকটা কমে আসবে বলে সকলের ধারণা।
জানা যায়, গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আনোয়ারার অতি গুরুত্বপূর্ণ চাতরী চৌমুহনী বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তাদের রয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণে একাধিক গ্রুপ। তারা বাজারে সিএনজি স্টেশন গড়ে অবৈধ টোকেন ব্যবসা, অটোরিকশার পার্কিং এবং প্রধান সড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ভাড়ায় খাটানো, সড়কের ওপর হকার বসিয়ে ফুটপাত দখল আর বাজারের ভেতরে বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সম্প্রতি সরকারের পতনের পর খোলস পরিবর্তন করে নতুন সিন্ডিকেট এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন জানান, যানজট নিরসন, স্থানীয়দের ভোগান্তি কমানো, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, নির্বিঘ্নে নারী শ্রমিক ও পথচারীদের চলাচল ও পরিচ্ছন্ন বাজার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোন অবস্থাতে আমরা চাতরি চৌমহনী বাজারকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে দিব না। কেউ যদি আবারও আইন ভঙ্গ করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরবর্তীতে উপজেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার বটতলী রুস্তম হাটেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার ঘোষণা দেন তিনি।
অভিযানের বিষয়ে এএসপি সোহানুর রহমান সোহাগ জানান, চাতরী চৌমুহনী এই উপজেলাসহ বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পেকুয়া, চকরিয়া এবং মহেশখালী, কুতুবদিয়ার মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই বাজারে যানজট এবং অবৈধ হকারদের কারণে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই আনোয়ারা থানা পুলিশের উদ্যোগে এই উচ্ছেদ অভিযান করা হয়। আগামীতেও এই ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে।
এর আগে সকাল ১০টায় এএসপি সোহানুর রহমান সোহাগ ও ওসি মো. মনির হোসেন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী বলরাম চাকমা, কেইপিজেডের প্রতিনিধি এডমিন অফিসার আনোয়ার হোসেন ও কফিল উদ্দীন, আনোয়ারা থানা পুলিশের সদস্য, ট্রাফিক পুলিশ, কেইপিজেডের পরিচ্ছন্ন কর্মী, ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়রা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও উচ্ছেদ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।












