রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের ৪র্থ দিন শেষে লিডের পর শেষ দিনে আজ বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে দুটি ফলাফলের দিকে। সেটি হয় জয় কিংবা ড্র। মুশফিকুর রহিমের রেকর্ডময় ইনিংস ও সাদমান ইসলাম, মোমিনুল হক, লিটন দাস এবং মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ এখন সেই অবস্থানেই পৌঁছে গেছে। চার দিন শেষে এই টেস্টে ‘নৈতিক জয়’ তাই পেয়েই গেছে মুশফিকরা। তবে শেষ দিনে বোলাররা দারুণ কিছু করতে পারলে সত্যিকারের জয়ও ধরা দিতে পারে। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে এমন এক আশার মোড়েই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পাকিস্তানের প্রয়োজন এখনও ৯৪ রান। গতকাল শনিবার শেষ বিকেলে একটি উইকেট হারিয়েছে তারা। মুশফিকের অসাধারণ ইনিংস ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে রেকর্ড গড়া জুটিতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৫৬৫ রানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এটিই। সব মিলিয়েই বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান এটি। পাকিস্তান দিন শেষ করে ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে। বাংলাদেশের রান সংগ্রহকে রেকর্ডের উচ্চতায় তুলে নেওয়ার মূল কারিগর মুশফিক। পাকিস্তানে নিজের প্রথম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখেন তিনি দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। স্রেফ তার শেষটা হয় একটু আক্ষেপ নিয়ে। চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু আউট হয়ে যান ১৯১ রানে। ৫১৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩৪১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ২২ চার ও ১ ছক্কায়। এই ইনিংসের পথে দারুণ কিছু কীর্তিতে নাম লেখান ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের হয়ে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির (৫টি) ও রানের (২৩৮১) রেকর্ডে তিনি পেছনে ফেলেন তামিম ইকবালকে (৪ সেঞ্চুরিতে ২৩২৯ রান)। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক রান তো আগেই করে ফেলেন তিনি। মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন তিনি ১৯৬ রান। ১৪ বছর আগে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ১৪৫ রানের জুটি পেছনে পড়ে যায় অনেকটা। মিরাজ আউট হন ৭৭ রানে। ৫ উইকেটে ৩১৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিক ও লিটন কুমার দাস সতর্ক ব্যাটিংয়ে শুরুর হুমকি কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। লিটনের সেই চেষ্টায় খেই হারান হঠাৎ। নাসিম শাহর বাড়তি লাফানো বল শরীরের কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে উইকেট হারান তিনি। আগের দিনের ৫২ রানের সঙ্গে তিনি যোগ করতে পারেন আর চার রান। দিনের শুরুতে উইকেট পেয়ে পাকিস্তান তখন উজ্জীবিত। কে জানত, আরেকটি উইকেটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে তাদেরকে। মিরাজ ক্রিজে গিয়ে সময় নিয়ে থিতু হন। মুশফিকের ব্যাটেও ছিল না তাড়া। দিনের প্রথম বাউন্ডারি আসে চতুর্দশ ওভারে মিরাজের ব্যাট থেকে। আগের ১৩ ওভারে রান ওঠে কেবল ২০। মুশফিক দিনের প্রথম বাউন্ডারি মারেন ২০তম ওভারে। ক্রমে সাবলিল হয়ে ওঠেন দুজনই। সাইম আইয়ুবের বলে টানা দুটি বাউন্ডারিতে শতরানের কাছাকাছি যান মুশফিক। লাঞ্চের একটু আগে সেঞ্চুরি পূরণ করে হুঙ্কার ছুড়ে খ্যাপাটে উদযাপনে মেতে ওঠেন তিনি। এটি তার একাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডে মুমিনুলকে ছুঁতে তার প্রয়োজন আর একটি সেঞ্চুরি। লাঞ্চের পরও দুজনের জুটি এগিয়ে যায় নির্বিঘ্নে। মিরাজের ফিফটি আসে ১২০ বলে। একের পর এক মাইলফলক পেরিয়ে যান দুজন। জুটি রান একশ ছুঁয়ে রেকর্ড ভেঙে দেড়শ পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। গোটা দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। একটি সুযোগ অবশ্য দিয়েছিলেন মুশফিক। ১৫০ রানে সালমান আলি আঘার বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি বাবর আজম। মুশফিকের রান ও জুটি, দুটিই যখন দুইশর কাছে, তখনই আসে ধাক্কা। মোহাম্মদ আলির স্টাস্পের বাইরের বল সামনের পায়ে ড্রাইভ করার চেষ্টায় উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মুশফিক। ৯ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পাননি তিনি। এ জুটির দুইশ হয়নি চার রানের জন্য। এরপর হাসান মাহমুদ ক্রিজে গিয়ে চেষ্টা করেন মিরাজকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু তৃতীয় নতুন বলে পাকিস্তানি পেসাররা ইনিংস শেষ করে দেন দ্রুতই। ১৮ বল খেলে রান করতে পারেননি হাসান। তাকে ফিরিয়ে বিশেষ উদযাপনে মেতে ওঠেন এ দিন প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার খবর পাওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদি। একটু পর মিরাজকেও থামান বাঁহাতি এই পেসার। ৫১ ও ৬৯ রানে জীবন পাওয়া ব্যাটসম্যানের ইনিংস থামে ১৭৯ বলে ৭৭ রান করে। শরিফুল ইসলাম দশে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত কিছু রান বাড়িয়ে নেন। দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ২২ রান করেন তিনি। তাকে থামিয়েই ইনিংস শেষ করেন নাসিম শাহ। বাংলাদেশ লিড পায় ১১৭ রানের। বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে পাকিস্তান ধাক্কা খায় শুরুতেই। আগের ইনিংসে ফিফটি করা সাইম আইয়ুব এবার ১ রানেই বিদায় করেন শরিফুল। পরে আব্দুল্লাহ শাফিক ও শান মাসুদকেও বেশ কয়েকবার অস্বস্তিতে ফেলেন শরিফুল ও হাসান মাসুদ। যদিও আর উইকেট ধরা দেয়নি। উইকেট এখনও দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। ম্যাচ ড্রয়ের সম্ভাবনাই তাই বেশি। তবে অনিশ্চিয়তার ক্রিকেটে চমকপ্রদ কত কিছুই তো হয়। শেষ দিনে তেমন কিছুর আশাতেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ।