সেই ভারত সফর থেকে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটা একেবারেই বিবর্ণ। ব্যাটাররা পারছেন না তাদের দায়িত্বটা পালন করতে। নিজেদের মাঠে অন্তত অবস্থার পরিবর্তন হবে তেমনটি আশা ছিল টাইগার ভক্তদের। কিন্তু দেশের মাটিতে আরো খারাপ অবস্থা তাদের। প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ১০৬ রান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম ইনিংসে করেছে ৩০৮ রান। ২০২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশকে এখনো চোখ রাঙাচ্ছে ইনিংস পরাজয়। কারণ ইনিংস পরাজয় এড়াতে তাদের এখনো ১০১ রান দরকার। এরই মধ্যে ১০১ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা। তাই ইনিংস হারের শঙ্কাটা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্তত ২০০ রানের টার্গেট দেওয়া। তবে সেটা কতটা পারবে স্বাগতিকরা তা সময়ই বলে দেবে। অথচ দ্বিতীয় দিনের শুরুতে কাছাকাছিই ছিল দুই দল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যবধান এতটাই বাড়িয়ে নিয়েছে যে ইনিংস পরাজয় এড়ানোই এখন দায় বাংলাদেশের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার লিড সীমিত রাখার আশায় দিনের শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রমেই সেই আশা পিষ্ট হতে থাকে ভেরেইনা ও ভিয়ান মুল্ডারের ব্যাটে। আগের দিন শেষ বিকেলটা নির্বিঘ্নে পার করে দেওয়া দুই ব্যাটসম্যান নতুন দিনে দুর্দান্ত ব্যাট করে বাড়াতে থাকেন লিড। প্রথম ঘণ্টাতেই তুলে নেন ৬১ রান। বাংলাদেশের স্পিন চ্যালেঞ্জের জবাবে দুই ব্যাটসম্যানেরই মূল হাতিয়ার ছিল সুইপ ও রিভার্স সুইপ। দুই অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানকে অকার্যকর করে তোলেন তারা একের পর এক সুইপ খেলে। তাইজুলকে সুইপ করার ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা সাবধানী ছিলেন তারা। তবে নাগালে বল পেলে এই বাঁহাতি স্পিনারকেও সুইপে ছাড় দেননি তারা। দুজন মিলে দলের লিড একশ পার করে দেন অনায়াসেই। জুটিও পৌঁছে যায় শতরানে। নাঈমের বলে ৪৭ রানে শর্ট লেগে মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে রক্ষা পান মুল্ডার। পঞ্চদশ টেস্টে নিজের প্রথম পঞ্চাশের দেখা তিনি। দুজনের এই বন্ধন অবশেষে ছিন্ন করেন হাসান মাহমুদ। নতুন স্পেলে ফিরে দ্বিতীয় ওভারে বিদায় করেন তিনি ৫৪ রান করা মুল্ডারকে। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ১১৯ রানের দারুণ জুটি। পরের বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে কেশাভ মহারাজের বেলস উড়িয়ে দেন হাসান। এরপর ভেরেইনার সঙ্গে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে হতাশ করেন ডেন পেট। ১৩৪ বল খেলে ভেরেইনা সেঞ্চুরি তুলে নেন লাঞ্চের পর। ১৩৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এরপর পিটকে ৩২ রানে এলবিডব্লিউ করে শেষ পর্যন্ত ৬৬ রানে জুটি থামান মিরাজ। একটু পর মিরাজের বলেই স্টাম্পড হয়ে থামে ভেরেইনা আর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। তবে নাঈম ও মিরাজকে দুটি ছক্কায় দলের লিড দুইশ পার করান ভেরেইনা। ১১৪ রান করে ফিরেন ভেরেইনা। আগের দিন পাঁচ উইকেট শিকার করা তাইজুল এ দিন আর কোনো উইকেট যোগ করতে পারেননি। তবে হাসান মাহমুদ নিয়েছেন আগের দিনের এক উইকেটের সাথে আরো দুই উইকেট।
২০২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম দুই উইকেট হারায় চার রানেই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই কাগিসো রাবাদার সাধারণ এক লেংথ বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন সাদমান। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা ওপেনার এবার করতে পারেন এক রান। রাবাদার ওই ওভারেই বাড়তি লাফানো ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন মুমিনুল হক। রানের খাতা খোলা হয়নি তার। নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজে গিয়েই প্রথম বলে দুর্দান্ত এক ইয়র্কার ঠেকান কোনোরকমে। তবে অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলে দ্রুতই সাবলিল ব্যাটিং করতে থাকেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। ৪ রানে ২ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠে দল। কিন্তু কেশাভ মহারেজের কাছে হার মানতে হলো শান্তকে। তার দারুণ ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত শান্ত এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন ২৩ রানে। জুটি থেমে যায় ৫৫ রানে। মুশফিকুর রহিম ক্রিজে যাওয়ার পর আরেকটু গতিময় হয় দলের ইনিংস। স্পিনারদের সুইপের পর সুইপ খেলে চাপ সরানোর চেষ্টা করেন তিনি। সাবলিল ব্যাট করতে থাকেন জয়ও। শেষ বেলায় পিটের বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ দিয়েও রক্ষা পান জয়। এরপরই আলোক স্বল্পতায় শেষ হয়ে যায় দিনের খেলা। আর তাতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে বাংলাদেশ দল। ৮০ বলে ৩৮ রান নিয়ে দিন শেষ করেন জয়। আর ২৬ বলে ৩১ রানে অপরাজিত মুশফিক। তবে তাদের সামনেতো বটেই গোটা দলের সামনেই এখন চ্যালেঞ্জ আরও লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার।