আরব সাগরের তীর ঘেঁষে অবস্থিত মুম্বাইয়ের সবচাইতে বড় হোটেল তাজ মহল প্যালেস। এই হোটেলটির স্থাপত্য শৈলী সত্যিই নজরকাড়া। মোগল আমলের স্থাপত্যের মত এই বিশাল হোটেলটি একটি কারণে সারাবিশ্বে বেশ আলোচিত এবং পরিচিত। আর তা হচ্ছে ২০০৮ সালে এই হোটেলে হয়েছিল ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। যেখানে ১০ জন সন্ত্রাসীসহ নিহত হয়েছিলেন প্রায় ১৬৪ জন। আহত হয়েছিল ৩০৮ জন। ১৫ বছর আগের সে হামলার ক্ষত শুকিয়ে তাজ মহল প্যালেস আবার সেই আরব সাগরের কোল ঘেঁষে ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে গেট অব ইন্ডিয়া দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করে প্রতিদিন। গতকাল শনিবার সেই তাজ প্যালেস হোটেলের সামনে ভিড়টা আরো একটু বড় হয়েছিল বাংলাদেশের সাবাদিকদের কারণে। কারণ তাজ প্যালেস হোটেলের সাথে রয়েছে আরো একটি টাওয়ার। সেটিও তাজ প্যালেসেরই অংশ। সেখানেই রয়েছে বাংলাদেশ দল। আর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকরা যেন পাখির চোখ করে রেখেছিল সেই হোটেলকে। যদি কোনো ক্রিকেটার বের হয়, যদি কোনো ক্রিকেটার কিছু বলে। পুনেতে লিটন দাশের সঙ্গে টিম হোটেলে সৃষ্ট এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরেই কিনা মুম্বাইতে সাংবাদিকদের হোটেল লবিতে যেতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই সবাই হোটেলের সামনে রাস্তায় বসে অপেক্ষা করছিল যদি কাউকে পাওয়া যায়। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি সাংবাদিকদের। একজন মাত্র ক্রিকেটার বেরিয়েছিলেন। তিনি পেসার হাসান মাহমুদ। কিন্তু তিনি কারো সাথে কোনো কথা বলেননি। তিনি তার মত বেরিয়ে চলে গেছেন। তাই সাংবাদিকরাও ব্যর্থ মনোরথে ফিরে গেলেন যে যার যার মত।
গত বৃহস্পতিবার পুনেতে ভারতের বিপক্ষে খেলা শেষ হওয়ার পর গত শুক্রবার সড়ক পথে পুনে থেকে মুম্বাইতে আসে বাংলাদেশ দল। এসেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের কাছেই হোটেল তাজ প্যালেসে উঠে। গত শুক্রবারের পর শনিবারও বিশ্রামে কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। চেন্নাই থেকে পুনেতে যাওয়ার পর তিনদিন বিশ্রামে কাটিয়েছিল তারা। আর মুম্বাইতে দুদিন বিশ্রামে কাটিয়ে আজ থেকে অনুশীলনে নামবে টাইগাররা। আগামী মঙ্গলবার এই ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। এরই মধ্যে সবশেষ পুনেতে ভারতের কাছে হারের পর হ্যাটট্রিক হারের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ জয় দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করেছিল টাইগাররা। এবার নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আরেক শক্তিধর এবং ইনফর্ম দক্ষিণ আফ্রিকার মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল সুবিধা করতে পারছে না মোটেও। বিশেষ করে দলের ব্যাটাররা যেন মোটেও নিজেদের কাজটা করতে পারছে না। যেটা অন্যরা করতে পারছে। এবারের বিশ্বকাপে যেখানে প্রতিনিয়তই সাড়ে তিনশ কিংবা চারশ রান হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ২৫৬। যা আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে করেছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশ দলকে বেশি ভাবতে হচ্ছে নিজেদের বাটিং নিয়ে। এদিকে ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারেননি সাকিব আর হাসান। টাইগার অধিনায়ক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ম্যাচে খেলতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। আজ যখন দল অনুশীলনে নামবে তখন বুঝা যাবে সাকিবের ইনজুরির বর্তমান অবস্থা কি। এরই মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর প্রায় ৯ দিন বিশ্রাম পেয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। তবে তার ইনজুরির কি অবস্থা সেটা নিশ্চিত করে বলেননি কেউই।
গতকাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষেও যে এই মাঠে প্রোটিয়ারা রানের বন্যা বইয়ে দেবে সেটা বলা যায় নিশ্চিত করেই। আর দলটির ব্যাটাররা রয়েছে দারুণ ফর্মে। বোলাররা তো রয়েছেনই। টানা তিন ম্যাচে হারের পর এবার একটি জয়ের জন্য হন্য হয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। আর তার জন্যই আজ থেকে নিজেদের প্রস্তুত করতে নামবে সাকিবরা।