রমজান মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়। সে সময় বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের আলাদা কোনো নীতি নেই। রমজানকে ঘিরে বাড়তি রেমিট্যান্সের কারণে বাজারে তারল্য বেড়ে মুদ্রাস্ফীতিকে উস্কে দেয়। এই সময়ে টাকার প্রবাহ সংকুচিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পলিসি নির্ধারণ করা জরুরি। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতিকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনার পাশাপাশি এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশব্যাংক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় ষান্মাষিক (জানুয়ারি–জুন) মুদ্রানীতি ও বিনিময় হার বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটারি পলিসি বিভাগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অধীনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এস এম সোহরাব উদ্দিন, চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎমিলা ফরিদ, ক্লিপ্টন গ্রুপের সিইও এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র মহাব্যবস্থাপক সাইফুল আজিজ, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক শামীম রেজা, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের প্রতিনিধি শামীম ইকবালসহ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন খাতের নেতৃবৃন্দ মতামত প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, দেশে প্রতি অর্থবছরে দুই দফায় বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। কিন্তু এবারই প্রথম দেশের বাণিজ্যিক বন্দর শহরের ব্যবসায়ীসহ সকল স্টেক হোল্ডারদের মতামত গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের গ্রাহক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে ষান্মাষিক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতার আনায়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে কৃষি ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ। একজন কৃষক এই সুদে ঋণ নিয়ে ফসল বাজারজাত করলে তা বাড়তি দামেই করে। ফলে সবকিছুর দাম বাড়ে। এটি কমানো দরকার। লবণ শিল্পের জন্য ৪ শতাংশ হারে ঋণ সুবিধা থাকলেও তা অনেকেই জানে না। শুধু ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলে যেকোনো উদ্যোগ সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া তৈরি পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের মূল্য না বাড়ায় এ বিষয়ে তদারকি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতরণ না হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া, এসএমই ঋণ বাড়ানো ছাড়াও নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পক্ষে মত দেন উপস্থিত বক্তারা।