অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবসে সরকারি-বেসরকারি ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস আদালতে অনুপস্থিত থেকে সর্বশ্রেণীর কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচিকে সফল করে তোলেন। মুজিব-ইয়াহিয়া পরবর্তী বৈঠকের কোনও সময় নির্ধারণ না হওয়ায় জনমনে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উৎসুক জনতা তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ভিড় জমান। এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁয়ে ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে এবং তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের জন্য ৪৩,০০০ টন খাদ্যশস্যবাহী ‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামের একটি জাহাজের গতিপথ বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ ও অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিন তদন্তের জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্দ দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যান। ঢাকায় বিমানবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বশক্তি ও সম্পদ নিয়োগ করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যে কোনও ত্যাগ স্বীকারের শপথ নেন।
সারা দিন ধরে মিছিলের পর মিছিল করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে শোভাযাত্রাকারীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোলো। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হানে জনতাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তিসংগ্রামের পতাকা আরো ওপরে তুলে ধরো। ৭ কোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও। এদিনও বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরো সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কি না, সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ওয়ালি ন্যাপ প্রধান ওয়ালি খান ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। বৈঠকে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বঙ বেজেঞ্জোও উপস্থিত ছিলেন।