যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের আদালতে গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষ স্বীকারের পর উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত একজন মানুষ হিসাবে নিজ জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেছেন। তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ গতকাল বুধবার অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় পৌঁছেছে। অ্যাসাঞ্জকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে আসেন তার বাবা এবং স্ত্রী স্টেলা। অ্যাসাঞ্জের কিছু সমর্থকও তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হন। অ্যাসাঞ্জের আগমনে তারা উল্লাস করে। খবর বিডিনিউজের।
মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে নেওয়ার চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে আপস রফায় পৌঁছানোর পর সোমবার যুক্তরাজ্যের একটি উচ্চ নিরাপত্তার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। এরপর চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার তিনি যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে যান। গতকাল মারিয়ানার রাজধানী সাইপ্যানের আদালত ভবন গিয়ে দোষ স্বীকারের পর অ্যাসাঞ্জের মামলা শেষ হয় এবং তিনি পুরোপুরি মুক্ত হন। সাংবাদিকদেরকে এ সময় তার আইনজীবী বলেন, শেষ পর্যন্ত ১৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত মানুষ হিসেবে বাড়ি ফিরতে পারছেন। তিন ঘণ্টা শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার উদ্দেশে একটি উড়োজাহাজে চেপে সাইপ্যান ছাড়েন অ্যাসাঞ্জ।
উইকিলিকস জানিয়েছে, মাল্টাভিত্তিক ভিস্তাজেটের একটি ভাড়া করা উড়োজাহাজে করে তিনি দেশে ফিরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় ৬টা ৪১ মিনিটের দিকে তিনি ক্যানবেরায় নামেন। এর মাধ্যমে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ বহু বছর পর মুক্ত জীবনে ফিরলেন। ৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। এর আগে আরও ৭ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছিলেন অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে আইনি লড়াই করেছেন অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাজ্যের পুলিশ ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জকে ২০১৯ সালের গ্রেপ্তার করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশের ষড়যন্ত্রে জড়িত। তার ওয়েবসাইট উইকিলিকস ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের ১৮টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এসব অভিযোগের মুখোমুখি করার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে চাইছিল মার্কিন বিচার বিভাগ। কিন্তু অ্যাসাঞ্জ সর্বশক্তি দিয়ে তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ ঠেকানোর চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির আওতায় অভিযোগগুলোর একটিতে দোষ স্বীকার করে নিয়ে অ্যাসাঞ্জ মুক্তি পেলেন।
রাষ্ট্রের বাইরে কর্তৃত্ব প্রয়োগের বিশেষাধিকার বিপজ্জনক নজির : জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে ওয়াশিংটনে যারা তদবির করেছেন তাদের অন্যতম অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী বার্নাবি জয়েস বলেছেন, অ্যাসাঞ্জের মামলায় রাষ্ট্রের বাইরে কর্তৃত্ব প্রয়োগের বিশেষ অধিকারের দিকটি উদ্বেগজনক বিষয় বলে তিনি বিশ্বাস করেন। গতকাল বিবিসি নিউজডেকে তিনি বলেন, তিনি (অ্যাসাঞ্জ) যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে যান নাই। তারপরও একজনকে তৃতীয় একটি দেশের কারাগারে পাঠাচ্ছি আমরা। আমি মনে করি না সে যা করেছে তা ঠিক। আমি এখানে তার চরিত্রের সনদ দিতেও আসিনি। কিন্তু আমি বলতে চাই, তিনি যা করেছেন অস্ট্রেলিয়ায় তা অবৈধ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি কোনো আইন ভাঙেননি।