মুক্তি মিলবে কীভাবে

মাদকে জর্জরিত নগর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ জুন, ২০২১ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন কোনো না কোনো সংস্থা মাদকের চালান আটক করছে। সেই সাথে মাদক বহনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। মাদক প্রতিরোধে মাঠে আছে একাধিক সংস্থা। তবুও মাদক থেকে মুক্তি মিলছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি বর্ডার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তাহলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হতো। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন আরো শক্তিশালী করতে হবে। এর বাইরে রাজনৈতিকসহ সব মহল থেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। তবেই মাদকের ভয়াল বিস্তার থেকে রেহাই মিলবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকের কারণে কারাগারেও চাপ বাড়ছে। মামলা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দীর্ঘসূত্রতায় বছরের পর বছর বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি থাকছেন আসামিরা। কারাগার সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির ধারণক্ষতা পুরুষ ও নারী মিলে ২ হাজার ২৪৯ জন। বর্তমানে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এটি ধারণক্ষমতার তিন গুণেরও বেশি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের কারাগারগুলোর মধ্যে যে পরিমাণ বন্দি রয়েছে, তার ৩০ শতাংশেরও বেশি মাদক মামলার আসামি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সামাজিক উদ্যোগ ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে পরিবার থেকেই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের ছেলেমেয়েরা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে খেয়াল রাখতে হবে। মাদকের বিস্তার রোধ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার বা মাদক সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারই করে যাবে। চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই তিন মাসে সংস্থাটি নগরে ১ হাজার ৮১টি অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে মামলা দায়ের করে ২২০টি, গ্রেপ্তার করে ২২২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে। উদ্ধার করে ১ লাখ ১০ হাজার ৭৯০ পিস ॥ইয়াবা, ১৭ দশমিক ৪ কেজি গাঁজা ও ৮৩ লিটার চোলাই মদ। এছাড়া সংস্থাটি ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ হাজার ৬৪৫টি অভিযান চালায়। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার করে ৩ হাজার ২৬৬ জন মাদক ব্যবসায়ীকে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করে ২ হাজার ৯৮৯টি। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদক। সাথে জব্দ করা হয় নগদ টাকা, অস্ত্র, গাড়ি ও মোবাইল ফোন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) জানায়, ২০২০ সালে তারা ১৬ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ৪শ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে ২ হাজার ৮৮৫টি। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক।
একাধিক সংস্থা থাকার পরও নগরীতে মাদকের বিস্তার কমছে না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মাদক এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কিন্তু থেমে গেলে চলবে না। আরও বেশি তৎপর হয়ে আইনে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শেষ করতে হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টমেট্রোর উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান আজাদীকে বলেন, মাদক থেকে মুক্তি পেতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। যে যেখানে আছে সেখান থেকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শামসুল আলম আজাদীকে বলেন, আমরা প্রতিদিন মাদকসহ অপরাধী ধরছি। সম্প্রতি ৩০ হাজার ও ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ একাধিক আসামি ধরা হয়েছে। পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়েই মাদক নির্মূলে কাজ করছি। মামলা দিচ্ছি, কারাগারেও পাঠাচ্ছি। আমাদের কাছে তথ্য থাকলে রেইড দেব, অপরাধীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেব। তিনি বলেন, মাদক নির্মূলের বিষয়টি অনেক বড় একটি বিষয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরাতন পোর্ট মার্কেট এলাকায় চোরাই তেল দোকানিকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধ১ জুলাই থেকে বন্ধ হবে অবৈধ মুঠোফোন