মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের একটি বড় অংশ সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত

আয়েশা পারভীন চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

বাঙালির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস, ২৩ বছরের অন্যায় অত্যাচারের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ৬ দফার ইতিহাস, ৬৯ এর গণআন্দোলনের ইতিহাস, ৭১ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এত সব ইতিহাসের মূল চালিকাশক্তিও হচ্ছে আমাদের বঙ্গবন্ধু। স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা অর্জন এই পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাইতো সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এই মহান পুরুষকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। জাতীয় দিবস পালনের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের সন্তানদেরকে মুজিবীয় আদর্শে গড়ে তোলা। জাতির জনকের আদর্শিক চেতনায় উজ্জীবিত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ আবাস ভূমি তৈরীর দায়িত্ব আমাদের। বঙ্গবন্ধু সব সময় শিশুদের সান্নিধ্যে এসে আনন্দিত হতেন। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়। তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী ছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবের কোট পরে অবিকল বঙ্গবন্ধু সেজে রাজপথে শোভাযাত্রা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচীর মধ্যে অটিজম আক্রান্ত বিশেষ শিশুদের আঁকা ছবি নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। এই সোনার বাংলার প্রতিটি শিশু যাতে সঠিক পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ এখন অটিজম বিষয়ে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। শিশুকে শিশুর মত বড় করে তোলার দায়িত্ব মাবাবার পাশাপাশি সরকারও এগিয়ে এসেছে। নিশ্চিত শিক্ষার জন্য শেখ হাসিনার সরকার বছরের প্রথমে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতি বছর দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে। ছেলেমেয়েদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিদ্যালয়গুলোতে টিফিনের ব্যবস্থা করে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার নিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাউল, গম বিতরণের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধাদারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা তৈরী করতে হলে শৈশব থেকেই শিশুকে শিক্ষার একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। শিশুদের সান্নিধ্য বঙ্গবন্ধুকে সব সময় প্রশান্তি ও মুক্তি দিত। সুযোগ পেলেই তিনি শিশুকিশোরদের বিভিন্ন মিলন মেলায় ছুটে যেতেন। এই প্রসঙ্গে রোকনুজ্জামান দাদাভাই বলেন, ‘শিশুদের সব অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে দেখা যেত। ১৯৭২ এর মার্চ মাসে গণভবনে ‘সুগন্ধায়’ ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আঁকা ছবিগুলো বঙ্গবন্ধুকে মুগ্ধ করেছিল। ছবি আঁকায় আমাদের শিশুদের পারদর্শীতায় তিনি বিমোহিত হয়েছিলেন। তিনি শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার উপর জোর দেন। প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়ে যান। শিশুদের সকল প্রকার অগ্রযাত্রাকে সহজ ও সুগম করার জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এখানে উল্লেখ্য, যখন তিনি বাংলাদেশে এই আইন প্রণয়ন করেন তখনও জাতিসংঘ শিশু আইন প্রণয়ন করেনি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করেন। ক্ষুধাদারিদ্রমুক্ত ও নিরক্ষরবিহীন জাতি গড়ে তোলার জন্যে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে স্কুলকলেজমাদ্রাসাগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ব্যবস্থা নিয়েছেন। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকছে। ১৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙ্গিন,’ এই প্রতিপাদ্যে সকল শিশুর সম অধিকার, নিরাপদ আবাস ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিশুদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত সুনির্দিষ্ট ৪ টি পদক্ষেপ শিশুদের নিশ্চিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করেছে। এক () শিশু কল্যাণের জন্য মায়েদের সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন মা ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর, দুই () শিশুর সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় শিশু একাডেমি, তিন () শিশু শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অর্ন্তভুক্তি করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ৩৭,০০০ (সাইত্রিশ হাজার) প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, চার () ১৯৭৪ এর ২২ জুন শিশু আইন জারি করা। তারই পথ ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি বছরের শুরুতে সারা দেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন, শিশুশ্রম বন্ধের জন্যে প্রয়োজনীয় আইনের পাশাপাশি দরিদ্রদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে আইন করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ১৭ই মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্টের পর আমাদের ইতিহাস অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের একটি বড় অংশ সঠিক ইতিহাস জানতে ব্যর্থ হয়। ইতিহাসের সঠিক তথ্যগুলো বিকৃত করে তাদের মাথার মগজ ধোলায় করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকে পিছিয়ে নেওয়া হয়। তাইতো এক সময় এদেশে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি হয়। আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও অন্যান্য উন্নয়ন ধারাগুলো বার বার বাধা প্রাপ্ত হয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক স্বাধীন। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি নাগরিকের সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সকল অধিকার ভোগের অধিকার আছে। স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার। একটি দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমাদের কথা বলার অধিকার, স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা, মত প্রকাশের, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিজ ধর্ম পালন ইত্যাদি সব কিছুর অধিকার আছে।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ,

ডা: ফজলুলহাজেরা ডিগ্রী কলেজ, হালিশহর, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধঘটা করে উদযাপন ভালো লাগে না : জন্মদিনে রামেন্দু মজুমদার