মুক্তিযুদ্ধে ‘অপারেশন ইস্টার্ন রিফাইনারি’ স্মরণ

বিমান বাহিনী প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারির উপর দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে উড়ে যায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৫টি জঙ্গি বিমান। একত্রে ৫টি জঙ্গি বিমান দুইবার চক্কর দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারির স্থাপনার উপর দিয়ে। মূলত ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হওয়ার পর ইস্টার্ন রিফাইনারিকে অকার্যকর করার অপারেশন হয়। পাকিস্তানী বাহিনীর জ্বালানি সংগ্রহ রুখে দিতে বিমান বাহিনীর এই অপারেশন বেশ ফলপ্রসূ হয়। গতকাল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিমান উড়ানোর মধ্য দিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারির সেই অপারেশনকে স্মরণ করা হয়। বিমান বাহিনীর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলিতে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বরকে ‘বিমান বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাগণ সেক্টর কমান্ডারের মত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছিলেন। রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়ংকর দিনগুলোতে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি স্বতন্ত্র বিমান বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। আর এ লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনীর সহায়তায় একটি অপার বিমান, একটি ড্যাকোটা বিমান ও একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার এবং ৫৭ জন বাঙালি বৈমানিক, কারিগরি পেশার বিমান সেনা ও বেসামরিক বৈমানিকদের সমন্বয়ে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাত্রা শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৫০টি বিমান অভিযান সাফল্যের সাথে পরিচালনার মাধ্যমে ‘কিলো ফ্লাইট’ বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর পিটি-৬ বিমানের মাধ্যমে ফরিদপুর, নারায়নগঞ্জ এবং ঢাকার আকাশে ‘৫০’ এর একটি অবয়ব তৈরির মাধ্যমে চমৎকার উড্ডয়ন শৈলী প্রদর্শন করা হয়। কিলো ফ্লাইটের সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ অবদানকে সম্মান প্রদর্শন করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দক্ষ বৈমানিকগণ মিগ-২৯, এফ-৭ জঙ্গি বিমানের মাধ্যমে নারায়নগঞ্জের গোদনাইল, চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি, নোয়াখালীর দাগনভূইয়ায় অবস্থিত কিলোফ্লাইটের অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় এরিয়াল ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন। এছাড়াও সি-১৩০, কে-৮ডব্লিউ, পিটি-৬ বিমান এবং এমআই-১৭ ও বেল-২১২ হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে একটি মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট এর আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। এছাড়াও তিনি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিমান বাহিনী প্রতিষ্ঠার উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘কিলো ফ্লাইট’ প্রদর্শনের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের অবদান ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কিলো ফ্লাইটের বীরযোদ্ধাসহ সেনা ও নৌ-বাহিনী প্রধান, প্রাক্তন বিমান বাহিনী প্রধানগণ, বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, আমন্ত্রিত অতিথিগণ এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা শতায়ু হলে দেশ আরো উন্নত হবে
পরবর্তী নিবন্ধমেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী