মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মাস এলেই আমার চট্টগ্রামের কথা খুব বেশি করে মনে পড়ে। কারণ এ মাটি বড় পবিত্র মাটি, আমার জন্মভূমি। মাস্টারদা সূর্যসেন থেকে বঙ্গবন্ধু– কত বীরশ্রেষ্ঠদের বীরত্বগাথা! রাজনৈতিক মঞ্চে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নায়ক শেখ মুজিব। তাঁর সংগ্রামী অভিযাত্রায় ঢাকার পরেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রামকে। ১৯৬৬ সালে আনুষ্ঠানিক সভা সমাবেশ করে প্রথম ছয় দফার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই বীর চট্টলার মাটি থেকে।
এখানকার এক ঐতিহ্যবাহী ও বাণিজ্যিক এলাকা রিয়াজউদ্দিন বাজার। কত মানুষের কত স্মৃতি জমাটবাঁধা আছে এই ঐতিহাসিক ব্যবসাকেন্দ্রে। আমারও জীবনের কয়েকটি মাস অতিবাহিত হয়েছে এখানে। গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে দিনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আমার রিয়াজউদ্দিন বাজারে। আমি ছিলাম সংবাদপত্রের হকার। পেটের জন্য পত্রিকা বিক্রি করেছি। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিয়েছি। আবার সওদাগর–মহাজনের গদিঘরের সামনে গিয়ে নানা রকম অভিনয় করে বকশিস পেয়েছি। আমি যখন হাঁক দিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ডায়ালগ বলতাম– ‘ওই চেয়ে দেখুন বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে রক্তের আলপনা…।’ তখন দেখতাম চারদিকে অসংখ্য মানুষের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ বন্দুকের নল উঁচিয়ে তেড়ে আসতো মিলিটারি– ‘ইধার কেয়া হোরারায়ে, হোরারায়ে।’ লোকজন সব যে যেদিকে পারতো, পালিয়ে যেতো। আমি পত্রিকা হাতে একা পড়ে থাকতাম। আমার অঙ্গভঙ্গি হাবভাব দেখে কিছু পাকিস্তানি সৈন্য টাইটেল দিয়েছিল ইয়ে শালা এক নম্বর ম্যাড হ্যায় অর্থাৎ এ শালা এক নম্বরের পাগল। কেউ হয়তো ২/৪ ঘা মেরে হাসতে হাসতে চলে যেত। নয়টি মাস পাগলামি করেই বেঁচে ছিলাম। সেই কাহিনি বলার আগে একটু পেছনে তাকনো যাক।
পাঠকদের জানিয়ে রাখি, অবশ্য কেউ কেউ জানেনও–কিছু লেখালেখি করলেও, কিছু বইপত্র বের হলেও মূলত আমি একজন যাত্রাশিল্পী। বিরতিহীনভাবে প্রায় ৬০ বছর কেটেছে আমার এ শিল্পে। বছর দুই আগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দিয়েছে আমাকে। ১৯৭১ সালে আমি ছিলাম চট্টগ্রামের বাবুল অপেরায়। মার্চে আমরা যাত্রাগান করি ময়মনসিংহ– নেত্রকোনা অঞ্চলে। সেই সময়কার জাতীয় জীবনে দুর্যোগ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তানি শাসকদের টালবাহানা, বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা– ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এবং চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সর্বাত্মক হরতাল পালন, মিছিল মিটিং সমাবেশ, কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতি কর্মীদের ঐক্যবন্ধ গণজাগরণ গড়ে তোলা– এসব ঘটনাবলীর সঙ্গে আমাদের যাত্রাশিল্পীদেরও কম–বেশি যোগাযোগ ছিল। ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে লালদিঘি ময়দানে মঞ্চস্থ হয় অধ্যাপক মমতাজ উদদীনের নাটক ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তার একদিন পরেই নেত্রকোনা জেলার (তখন মহকুমা) পূর্বধলা হাই স্কুল মাঠে বাবুল অপেরার যাত্রা চলছিল ‘বীর রমণী চাদ সুলতানা।’ এ পালায় এক সেনানায়কের প্রতি অভিনেত্রী জাহানারা বেগমের সংলাপ ছিল এ রকম: ‘কেন আপনার সৈন্যদলকে লেলিয়ে দিয়েছেন নিরীহ মানুষের ওপর? কত দোকান পসার লুণ্ঠিত হয়েছে, কত মসজিদ মন্দির ধ্বংস হয়েছে খবর রাখেন কিছু?’ ঘটনার কী আশ্চর্য যোগাযোগ– ওই সময় অর্থাৎ গভীর রাতে ঢাকায় রাজারবার, গুলিস্তান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক সৈন্যদের নির্বিচারে গোলাগুলি চলছিল। এর কয়েকদিন আগে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানিয়ে বাবুল অপেরার প্রধান অভিনেত্রী মঞ্জুশ্রী মুখার্জী গেয়েছিলেন: ‘ধন্য বাংলা হে বিজয়ী বীর ধরিয়া তোমায় বক্ষে / কত যে সাজাল কুসুম অর্ঘ্য তোমার চরণ লক্ষ্যে।’ জাতীয় জাগরণে, বিভিন্ন দুর্যোগে, বিপর্যয়ে নাগরিক সমাজের পাশাপাশি প্রান্তিক জনগণ বিশেষ করে যাত্রাশিল্পীদেরও যে কম–বেশী ভূমিকা ছিল না তা নয়। তবে নিষ্ঠাবান অনুসন্ধিৎসু সংবাদকর্মী ও গবেষকদের ঔদাসীন্যের কারণে জাতীয় জীবনে তা অনেকটা আবিস্কৃত হয়নি। যাক, আসল কথায় ফিরে আসি। ’৭১–এর মহান মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনের এক বিচিত্র ও দুর্লভ অভিজ্ঞতা। বার বার মরতে গিয়েও বিধাতার অশেষ কৃপায় বেঁচে উঠেছি। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে মিলিটারিরা গুলি করতে যাবে, হঠাৎ অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছি। আঃ ৫৩ বছর আগের সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। জুলাই মাসের শেষের দিকে ময়মনসিংহের এক গ্রাম থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। শম্ভুগঞ্জ ঘাটে এসে দেখি অনেক পাকিস্তানি সৈন্য গিজ গিজ করছে। তারা বাঙালিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। সন্দেহ হলেই গুলি করে লাশ ফেলে দিচ্ছে নদীতে। কী নির্মম, বীভৎস দৃশ্য। মনে মনে ভাবলাম, আজই আমার এই পৃথিবীতে শেষ দিন। শেষবারের মতো মা–বাবা, ভাই–বোন, বন্ধু–বান্ধব সবাইকে স্মরণ করলাম। নৌকায় খেয়া পার হতেই কয়েকজন বাঙালি যুবককে সৈন্যরা ধরে ফেলল। আমাকে বলল– ‘আপ যাইয়ে মওলানা সাব। মাত ঘাবড়াও।’ আমার পরনে ছিল পায়জামা, পাঞ্জাবী, মুখভর্তি দাড়ি, মাথায় নামাজি টুপি। এই মেকাপেই সেদিন হানাদারদের কবল থেকে ছাড় পেয়েছিলাম। মনে হয় পুনর্জীবন পেলাম। নিজ গ্রামে পৌঁছে দেখলাম বেশির ভাগ বাড়ি ঘর পুড়ে ছাই, যেন ধ্বংসস্তুপ। আমাদের স্কুলের হেডমাস্টার পরিমল মজুমদারকে যেদিন আলবদর রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায় (স্যারের ছাত্ররাই এ জঘন্য কাজটি করেছে), তখন ভাবলাম হা–হুতোশ করে লাভ নেই। এটাই নিয়তি। সাত পাঁচ চিন্তা না করে চলে এলাম শহরে। ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়, হতাশায় কোথায় যাচ্ছি, আমি নিজেও জানিনা। আন্দারকিল্লার মোড়ে যখন এলাম, তখন সন্ধ্যা হয় হয়। পকেটে পয়সা কড়ি কিছু নেই। বাবুল অপেরার মালিকের ঘাটফরহাদবেগের বাড়িতে না হয় রাত কাটালাম। কিন্তু খাওয়া–দাওয়া হবে কোথায় ! একটু একটু হাটছি আর ভাবছি– ভবিতব্য কোথায় ! এমন সময় দেখলাম দৈনিক পূর্বতারার অফিসের সামনে আমার বয়সী কিছু ছেলে ছোকরার ভিড়। পূর্বতারা দিনে বের হয় না। ওটা সান্ধ্যকালীন পত্রিকা। প্রতি কপির বিক্রয় মূল্য ১০ পয়সা। তবে যারা পত্রিকা নেবে, সেই হকারদের ৫ পয়সা করে ২০ কপির দাম ১ টাকা আগে দিতে হবে। ২০ কপি বেচতে পারলে ১ টাকা লাভ। আমার খুব শখ হলো পত্রিকা বিক্রি করার। কিন্তু পকেট তো গড়ের মাঠ। ১ টাকা আগে দেবার ক্ষমতা আমার নেই। আমি দেখলাম হু হু করে ছেলে পিলেরা পত্রিকা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি লজ্জা শরম ছেড়ে খুব সাহসের সঙ্গে অভিনয়ের ভঙ্গিমায় ম্যানেজারকে বললাম, ‘ওহে ভাই ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর আমি। একটি পয়সাও পকেটে নাই। যদি মেহেরবাণী করে ২০টি পত্রিকা দেন তাহলে ভীষণভাবে উপকৃত হই। আগে কোন পয়সা দিতে পারব না। পত্রিকা বিক্রি করে আপনার টাকা পরিশোধ করব। এই দয়াটুকু প্রার্থনা করছি হুজুরে মেহেরবান।’
এখানেও ঈশ্বর আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। ম্যানেজার ভদ্রলোক বিশ্বাস করে ২০টি পূর্বতারা দিয়েছিলেন। সময়টা হবে বোধ হয় আগস্টের মাঝামাঝি। প্রথম পাতার ব্যানার হেডিংগুলো দেখে নিলাম। তারপর একটি হেডিং ধরে উচ্চৈস্বরে পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়াতে দৌড়াতে বলতে লাগলাম– ‘শেখ মুজিবের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিবিসির মন্তব্য’– আমি কখনও দৌড়াচ্ছি, কখনও লাফ দিচ্ছি। বলতে বলতে রেয়াজউদ্দিন বাজারের মুখে অপর্ণাচরণ স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ালাম। ইতোমধ্যে আমাকে ঘিরে অসংখ্য মানুষের জটলা। ‘ভাই এক কপি দাও, এক কপি দাও।’ ২০ কপি শেষ করে আবার ছুটলাম পূর্বতারা অফিসের দিকে। এবার ২ টাকা জমা দিয়ে আরও ২০ কপি নিলাম। হাজারি গলির মুখে আসতেই সব শেষ। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে অনুনয় বিনয় করে আরও ২০ কপি নিলাম। এগুলো শেষ করলাম রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাশে চৈতন্য গলির মুখে দাঁড়িয়ে। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ৬০টি পত্রিকা বিক্রি করলাম। ৩ টাকা লাভ হলো। ভাত–ডাল–মাছ খেলাম ১২ আনায়। পরদিন আবার একই পদ্ধতিতে হেডিং ধরে ধরে পত্রিকা বিক্রি করলাম। একবার আবেগে উত্তেজনায় লোকজন আমার কাছ থেকে পত্রিকা নিতে গিয়ে কয়েকটি ছিঁড়েই ফেলল। ওই সংখ্যার প্রধান শিরোনাম ছিল– ‘আমার মাথা নোয়াতে পারে, বিশ্বে হত বড় শক্তি কোথাও নেই– শেখ মুজিব।’ এরমধ্যে সান্ধ্য পত্রিকা দৈনিক পূর্বতারার সঙ্গে আমি ঢাকার কয়েকটি জনপ্রিয় পত্রিকাও সাথে নিলাম। যেমন দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক চিত্রালী– এগুলো। এসবের সাথে আমাদের চাটগাঁর নামকরা পত্রিকা দৈনিক আজাদী তো ছিলই। আমার পত্রিকা বিক্রির প্রধান ঘাটি ছিল রিয়াজউদ্দিন বাজারের ৩টি গলি এবং কখনও কখনও পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা। বাজারের যেসব দোকান ও স্টোরে আমি পত্রিকা দিতাম সে নামগুলো এখনও আমার ডায়েরীতে লেখা আছে– হাবিব ট্রেডিং সিন্ডিকেট, আল আমিন রেস্তোরাঁ, শাহ আমানত টাওয়ার, কওমি ক্লথ স্টোর, শাড়ি গার্ডেন, প্রগতি ক্লথ স্টোর, নোবেল ক্লথ স্টোর, বিসমিল্লাহ গার্মেন্টস, আল মদিনা বোরকা হাউস, নূর ফেন্সি স্টোরস, বার্মা স্টোর আরও অনেক। আমি প্রত্যেক দোকানের সামনে ওদের আবদার মতো অভিনয় শৈলী দেখাতাম। কখনও নবাব সিরাজউদ্দৌলা, কখনও টিপু সুলতান, কখনও মাস্টারদা সূর্য সেন। খুব অল্পদিনের মধ্যে আমি রিয়াজউদ্দিন বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠলাম। বিপদের সংকেত পেলে অর্থাৎ পাঞ্জাবীরা ছুটে আসতে দেখলেই আমি দৌড়ে আশ্রয় নিতাম বার্মা স্টোর, নূর ফেন্সী স্টোর ও শাহ আমানত টাওয়ারে। অনেক সময় মহাজনদের সঙ্গে আমার আহার পর্বও চলতো।
একদিনের ঘটনা খুব মনে পড়ে। শাহ আমানত টাওয়ার থেকে বেরিয়ে লাভ লেইনে বাসার দিকে হেঁটে রওয়ানা হয়েছি। রাত তখন ৯টা। যুদ্ধের সময় অনেক রাত। শাঁ করে একটা জীপ ছুটে এসে আমাকে ঘেঁষে দাড়াল। ভেতর থেকে এক স্বাস্থ্যবান যুবক হুকুম দিল গাড়িতে ওঠ। উঠলাম। জীপটি এক তিন তলার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। ওই যুবক আমাকে দোতলার একটি কক্ষে নিয়ে বসাল। হাল্কা নাশতা খাওয়াল। তারপর কিছু খবরের কাগজের প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বললো– ‘তোমার কাজ হবে এসব পত্রিকা গোপনে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের লোকজনের হাতে পৌঁছে দেওয়া।’ আমি একটু সাহস করে বললাম– ‘কিন্তু আমি কার পত্রিকা, কিসের পত্রিকা কোথায় পাঠাচ্ছি তা তো জানি না।’ যুবকটি বলল– ‘প্যাকেট খোল।’ খুলতেই বিস্ময়ে আনন্দে শিহরণে আমার কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেল। দেখলাম ‘জয় বাংলা’ ও ‘বাংলার বাণী’ নামে দুটি পত্রিকার প্যাকেট। আমাকে যে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তার কাছে শুনেছি মুক্তাঞ্চল থেকে অনেকগুলো মাসিক পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলো তাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যুবকটি বললো, ‘এটাও এক ধরনের মুক্তিযুদ্ধ। কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করছে, কেউ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক। আর মুক্তিযোদ্ধাদের পত্রিকা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়ে তুমি হবে আমাদের সহযোদ্ধা’ আমি যেন অধিক উত্তেজনায় বেসামাল হয়ে পড়লাম। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলাম ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ যুবকটি আমার মুখ চেপে ধরে বলল, ‘এই চুপ। আশেপাশে রাজাকার আলবদর শুয়োরের বাচ্চারা ওৎ পেতে থাকতে পারে।’
অক্টোবর নভেম্বরের দিকে ভয়ংকর মূর্তিতে জ্বলে উঠল আমাদের সোনার ছেলেরা। তাদের ‘কেচকি মাইর’ খাইয়া পাকিস্তানিরা ধরাশায়ী হতে শুরু করল। ওইতো দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার সূর্য। সাবাস, সাবাস মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিকরা। আমি তখন ২৩ বছরের যুবক। আমিও যুদ্ধ করেছি পত্রিকা হাতে নিয়ে, স্লোগান দিয়ে। বঙ্গবন্ধু যে বলেছেন ‘আমাদের দাবায় রাখতে পারবা না। যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপাইয়া পড়।’