মীরসরাই শিল্পনগর সমুদ্রসৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চোখের নোনতা জল, আমাদের রক্তের ঘনত্ব, সমুদ্রের পানিরও সেই একই ঘনত্ব। সমুদ্রের প্রতি আমরা এক ধরনের আকর্ষণ তো অনুভব করবই। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই আকর্ষণ তীব্রভাবে অনুভব করে।’ সমুদ্র বিলাস গল্পগ্রন্থে কথাগুলো লিখেছিলেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ। আসলেই তো! সমুদ্র কার না প্রিয়? মানুষ মানেই তার কাছে সমুদ্র পছন্দের। ঠিক তেমনই প্রাকৃতিক সহজাত নিয়মেই মীরসরাই উপকূলে সম্প্রতি ভিড় বেড়েছে সমুদ্র বিলাসীদের। বিশেষ করে মীরসরাইয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা শিল্পনগর সমুদ্রসৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে।

দীর্ঘ একদশক ধরে সৃজন হওয়া এখানকার জাতীয় অর্থনৈতিক শিল্পনগরের বিশাল ফ্যাক্টরি ও গার্মেন্টস শিল্পের পাশাপাশি রয়েছে খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশ। চারপাশে উঁচুনিচু সবুজ ভূমি, দিগন্ত বিস্তৃত নীলাকাশ আর আঁকাবাঁকা পথ; যেন প্রকৃতির সাথে মানুষের আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। এর পাশেই বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতটি। কর্মজীবী বা সাধারণ মানুষ একটু সময় পেলেই ছুটে যাচ্ছে এই সৈকতে। শিল্পনগরের পাশে সুরক্ষার জন্য নির্মিত সুপার ডাইক ঘেঁষেই সৃজিত হয়েছে এই সৈকত। ঈদের ছুটি ছাড়াও প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সাগরের জোয়ারভাটা সৈকতের রূপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতজুড়ে উপচে পড়া পর্যটকদের ভিড়। হাজারো মানুষ পরিবারপরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে এখানে সমুদ্র দেখতে এসেছেন। সৈকতের আশপাশে কোনো দোকানপাট না থাকলেও দুয়েকজন ফেরিওয়ালার দেখা মেলে। জানতে চাইলে দর্শনার্থীরা জানানতারা সমুদ্রের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।

ফেনী থেকে ঘুরতে আসা পিয়াল মাহমুদ বলেন, এই প্রথম এখানে এসেছি। সত্যিই অসাধারণ এক জায়গা। সমুদ্রের গর্জন, মনোরম হাওয়া আর প্রশান্তিময় পরিবেশ যে কারো মন ভালো করে দেবে। পরিবারপরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর আদর্শ স্থান এটি। পর্যটন স্পট হিসেবে সরকারি উদ্যোগের দাবি জানিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষিকা ইসমত আরা বলেন, এখানে এসে কক্সবাজারের একটুখানি অনুভূতি পাওয়া যায়। সরকার চাইলে এটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। উন্নয়ন আর রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে মীরসরাইয়ের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে সৈকতটি।

পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবের কথা জানিয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, এখানে ঘুরতে এসে অনেক সময় শৌচাগারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু কোনো গণশৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে এখানে যদি খাবারের দোকান, বিশ্রামাগার ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়, তবে পর্যটকদের জন্য আরও উপযোগী হবে।

জানা গেছে, একসময় এই জায়গায় পর্যাপ্ত যোগাযোগের কোনো সুবিধা ছিল না। স্থানীয় জেলেরা খাল বা নদীপথে নৌকায় করে সমুদ্রে যেতেন মাছ ধরতে। কিন্তু জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠার পর বদলে যায় এখানকার দৃশ্যপট। সাগর ঘেঁষে নির্মিত হয় সুপার ডাইক, বসানো হয় ব্লক। এসব উন্নয়নের পর ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় এই সৈকতের সৌন্দর্য। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে খুব শিগগিরই মিনি সিবিচ হিসেবে পরিচিত এই শিল্পনগর সমুদ্রসৈকত মীরসরাইয়ের অন্যতম পর্যটন স্পটে রূপ নেবে।

এ বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, এই উপকূলাঞ্চলটি যেহেতু অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিনস্থ, তাই উনাদেরই এখতিয়ার দর্শণার্থীদের জন্য আদৌ কিছু করা সম্ভব কিনা।

এ বিষয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের উপপরিচালক আবু তৈয়বের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে কর্তৃপক্ষের পিআরও বিভাগই সঠিকভাবে বলতে পারবেন। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পর্যালোচনা ও আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টি-বাতাসে নুয়ে পড়লেও বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা