মীরসরাই-মাতারবাড়ীতে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে হচ্ছে সমীক্ষা

চেম্বারে সিসিসিআই জাপান ডেস্ক উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম চেম্বারে স্থাপন করা হয়েছে ‘সিসিসিআই জাপান ডেস্ক’। গতকাল দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই), জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো) এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে এই ডেস্ক স্থাপিত হয়েছে। এই উপলক্ষে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। তিনি ফিতা কেটে ও লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে ডেস্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি খুবই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদেশ দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির কারণে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ হাজার মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় অর্জন করবে বলে আমি আশা করছি। অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে মাতারবাড়ী ও মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমীক্ষা পরিচালিত হচ্ছে বলে অবহিত করেন জাপান রাষ্ট্রদূত।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার জাপান। এদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেবিসিসিআই ও জেটরো সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরবর্তীতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছর জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রামে দূতাবাসের সহযোগিতায় বে অব বেঙ্গল গ্রোথ সামিট আয়োজন করা হবে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, চট্টগ্রামে বন্দর সম্প্রসারণসহ যোগাযোগ, লজিস্টিকস ও অবকাঠামো খাতে জাপান বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। আগামীতে এ ডেস্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্ভাব্য জাপানি বিনিয়োগকারীরা যথাযথ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে উপকৃত হবেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর এই ডেস্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, উভয় দেশের বেসরকারি খাত ও সরকারি খাতের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, সংশ্লিষ্ট আইনি পরামর্শ ও বাজার সংক্রান্ত তথ্য প্রদানসহ জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সর্বাত্মক সেবা ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
বিশেষ অতিথি জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি হায়াকাওয়া ইওহো বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমি মনে করি চট্টগ্রাম বাংলাদেশ ও অবশিষ্ট বিশ্বের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’। জেসিআইএডির সভাপতি হিকারি কাওয়াই বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে তিনশত এর অধিক জাপানি কোম্পানী ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে আরো কোম্পানী এ দেশে ব্যবসা স্থাপনে আগ্রহী হবে।
জেটরোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইওজি আন্দো বলেন, জেটরো জাপান ডেস্কের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও প্রসারে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে জাপান ডেস্ক বিজনেস প্রমোশনের একটি হাব হিসেবে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেবিসিসিআইর সভাপতি আসিফ এ. চৌধুরী বলেন, জাপানের ব্যবসায়ীদের সংস্কৃতির স্তম্ভ হচ্ছে সেবা। কাজেই এ ডেস্ক থেকে সম্ভাব্য জাপানিজ বিনিয়োগকারীদের সাথে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।
জেবিসিসিআইর সেক্রেটারি তারিক রাফি ভূঁইয়া বলেন, ২০০৮ সালে স্থাপিত নিউ ভিশন সলিউশন লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রায় ৯০টি কোম্পানীকে সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তিনি এ ডেস্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশেষ করে চট্টগ্রামের ব্যবসা ও বাণিজ্য বিষয়ক বাজার সমীক্ষা পরিচালনা পূর্বক প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা প্রদান করা হবে বলে জানান।
জেবিসিসিআইর উপদেষ্টা সালাহ্‌উদ্দীন কাসেম খান বলেন, জাপান ডেস্কের প্রবর্তন দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সূচনা করবে। জাপান ডেস্কের লিগ্যাল কাউন্সিল ব্যারিস্টার মিথি সানজানা মানসম্মত সেবা প্রদানের মাধ্যমে জাপান ডেস্ককে এশিয়ার বাইরে বিশ্ব পরিমন্ডলেও উদাহরণ সৃষ্টির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী, পেডরোলোর চেয়ারম্যান নাদের খান, এইচআরসির সিনিয়র পরিচালক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের (জেটিআই) পরিচালক জাকির ইবনে হাই, জাপান ডেস্কের লিগ্যাল কাউন্সেল ব্যারিস্টার ওমর এইচ খান, জাপান এ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর জেটিআই হেডকোয়ার্টার্স মাসাইওকি ইগোওসি, জার্মানির অনারারি কনসাল সাকির ইস্পাহানি, চেম্বার পরিচালকদের মধ্যে একেএম আক্‌তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, মো. ওমর ফারুক, হাসনাত মো. আবু ওবাইদা, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এসএম তাহসিন জোনায়েদ, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, তানভীর মোস্তফা চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিরুল আলম ফাহিম, চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, সাবেক পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী ও মাহফুজুল হক শাহ, জাপানের সাবেক অনারারি কনসাল জেনারেল নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয় বছর পর সচল অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন
পরবর্তী নিবন্ধফেসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের দেড় হাজার কোটি ডলারের মামলা