বর্ষার এই মৌসুমে মীরসরাই এলাকার পানের বরজগুলো এখন সেজেছে মনোরম সাজে। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বৈরীতা না হলে এবার ভালো ফলনই আশা করছেন কৃষকরা। তবে ফলন বাড়লেও স্থানীয় বাজারগুলোতে পানের দাম কমছে না বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, আগে মাত্র কয়েক হেক্টর জমিতে পান চাষ হতো। এখন প্রায় ১০ হেক্টরে পান চাষ হয়। পানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পানচাষিদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। পান উৎপাদনে মহেশখালীর পাশাপাশি মীরসরাইয়ের হিঙ্গুলী গ্রাম ও বারৈয়াঢালা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। বারৈয়ারহাট বাজারটি ‘পানের বারৈ’ (পান বিক্রেতাদের) হাট থেকেই নামকরণ। আবার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নটি ও পানের বারৈ থেকে নামকরণ করা হয়েছে। হিঙ্গুলী ও বারৈয়াঢালা পানের বরজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পান চাষে অধিক ফলন হয়ে থাকে। এই অঞ্চলে সাধারণত ঝাল পানের চাষ হয়। পানের সাইজ অন্য অঞ্চলের তুলনায় বড়। জানা যায়, উপজেলায় পানের চাষ ও ফলন বাড়লেও কমেনি বাজার দর। মীরসরাইয়ের মিঠাছরা, মীরসরাই, আবুতোরাবসহ সর্বত্র বর্তমানে পানের প্রতি বিড়া প্রায় ১৫০–২০০ টাকা। কিন্তু বিগত মৌসুমগুলোতে এই পানের দাম বিড়া প্রতি ৪০–৫০ টাকায় নেমে আসতো। এদিকে পানচাষিরা জানান, ফেনী, বারৈয়াহাট ও মিঠাছড়া বাজারে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার পানের হাট বসে। কিন্তু ভারত থেকে অবৈধ পথে (ছাগলনাইয়া) ব্যবসায়ীরা পান বিক্রির জন্য এখানকার হাটে আসায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় না। অবৈধপথে পান বিক্রি বন্ধ করলে এখানকার কৃষকরা লাভবান হবে মনে করছেন তারা।
বারৈয়াঢালা পান চাষি সমবায় সমিতির কার্যকরী সদস্য সুজিত নন্দী জানান, উপকরণ ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি এবং পানের বরজে রোগ বালাইসহ ইত্যাদি কারণে লোকসান হয়েছে তার। কিন্তু লোকসানের কথা ভুলে গিয়ে তিনি আবারো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তার জমিতে পান চাষে মনোযোগী হলেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক রতন বিহারী সেন জানান, কৃষি বিভাগের সঠিক পরার্মশ না পাওয়ায় এখানকার পান চাষিরা প্রধান উপকরণ খৈলের পরিবর্তে ইউরিয়া সার ব্যবহার করে থাকেন। খৈলের পরিবর্তে ইউরিয়ার ব্যবহারে বরজের প্রচুর ক্ষতি হয়। এছাড়া এখানকার কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে পান চাষে লাভবান হবে।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী শাহ আলম জানান, মীরসরাইয়ে পানচাষ আগের চেয়ে বেড়েছে অনেক। আগে মাত্র কয়েক হেক্টরে পান চাষ হতো। এখন প্রায় ১০ হেক্টর পান চাষ হয়। এছাড়া পানচাষিদের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি পানের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।