মীরসরাই উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত সবজি এখন আর হাটে গিয়ে বিক্রির অপেক্ষা করতে হয় না। উপজেলার উৎপাদিত এসব সবজি এতোটাই অর্গানিক যে, পাইকাররাই জমির পাশে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শীতের এই সময়ে মৌসুমি সবজির সময় এলে কৃষকরা পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন হাটে গিয়ে বিক্রি করতেন। বিশেষ করে মিঠাছরা, জোরারগঞ্জ, বড় দারোগারহাট, করেরহাট, মীরসরাই সদর, বারইয়াহাটসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকাররা ও নির্ধারিত স্থানে আসতেন। এখন দিনে দিনে সেই হাটগুলো ক্ষীণ হয়ে আসছে। কারণ কৃষকরা নয়, এখন পাইকাররাই ক্ষেতে এসে নিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এসব উৎপাদিত মৌসুমি সবজি।
গতকাল শুক্রবার ভোরে উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় দেখা যায়, কৃষি জমির পাশেই কয়েকজন পাইকার কৃষকের জমি থেকে তুলে নিচ্ছেন নানা সবজি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি নিজেরা মেপে মূল্য পরিশোধ করে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার আমবাড়িয়া, তালবাড়িয়া খৈয়াছরা, ওয়াহেদপুর, হাইতকান্দি, পূর্ব দুর্গাপুর, করেরহাট, হিঙ্গুলী এলাকার কৃষকদেরও এখন আর হাটে তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে যেতে হয় না।
আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম (৫৬) বলেন, এবার আগাম চাষ করা ফুলকপি ও বাঁধাকপি তুলতে শুরু করেছি। শুরুতেই ভালো দাম পাচ্ছি। পাইকাররাই এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে কেজি ৩০ টাকা করে। কিছুদিন পর তা ১০ টাকায়ও নেমে আসতে পারে। তাই এখনি খরচ উঠে যাবার উপযুক্ত সময়। চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকার কবির উদ্দিন (৪৬) বলেন, আমবাড়িয়া গ্রামের সবজিগুলো চট্টগ্রামের অনেক ক্রেতা খুব পছন্দ করেন। তাই ১০ টাকা বাড়তিও বিক্রি করা যায়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার মীরসরাই উপজেলায় ১২০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক–সবজি চাষ করা হয়েছে। মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন কৃষি জমিতে ৬৬০ হেক্টর শিম, ৫০ হেক্টর জমিতে লাল শাক, ৬৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ৯০ হেক্টর জমিতে লাউ, পালং শাক, মুলা শাক, বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বরবটিসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করা হয়েছে। বেশি সবজি চাষ হয় দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে।
সরেজমিনে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন কর্মব্যস্ততা দেখা গেছে। কেউ ক্ষেতে সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউবা জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। ওয়াহেদপুর, খৈয়াছড়া, আমবাড়িয়া, দুর্গাপুর, আজমনগরসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে এখন মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বরবটি, লাউ, মরিচ, টমেটো চাষ চলছে। সকাল–সন্ধ্যা সবজিতে পরিচর্যা করছেন। আবার অনেকেই আগাম সবজি মাঠ থেকে তুলে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ১২০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে।
কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এখনো এখানকার সবজি পুরোপুরি বাজারে আসেনি। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি চাষে বেশ লাভবান হওয়া যাবে।












