প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও সংঘর্ষের কারণে মীরসরাই ও সীতাকুণ্ডে পণ্ড হয়ে গেছে সমাবেশ। মীরসরাইয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি ও লাঠিসোটা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ২৫ জন গুরুতর আহত হন। অন্যদিকে সীতাকুণ্ডে দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে সংঘর্ষের আশংকায় পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে হতে পারেনি দুই গ্রুপের সমাবেশ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মীরসরাইয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা থেকে মীরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে পরষ্পর চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি ও লাঠিসোটা নিয়ে মারামারি শুরু হয়। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অন্তঃত ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থা দেখে একপর্যায়ে সমাবেশ মুলতবি ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাহবুবুর রহমান রুহেল। তিনি আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর মীরসরাইয়ে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে অন্তঃত ১২ জন সভাপতি ও সেক্রেটারি প্রার্থী মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছিল। আসন্ন সম্মেলনকে উৎসবমুখর করতে মহড়ার আয়োজন করা হয়। উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোস্তফা মানিকের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন মান্নার সঞ্চালনায় বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হয় । মঞ্চে ছিলেন প্রধান অতিথি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুব রহমান রুহেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর ভূঞাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অতিথিরা বক্তব্যও রাখছিলেন। আসন্ন সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন প্রার্থীদের পক্ষে একে একে মিছিল আসছিল সমাবেশে। অন্তঃত কয়েক হাজার নেতাকর্মী এসে জড়ো হয় সমাবেশস্থলে। সাধারণ অতিথি ও নেতাকর্মীদের বসার সংকুলান হচ্ছিল না সমাবেশস্থলে। এমন সময় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সভাপতি প্রার্থী মাঈনুর ইসলাম রানা ও সাধারন সম্পাদক প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল ভূঞার সমর্থকরা বার বার শ্লোগান দিতে থাকে। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তাদের বিরত থাকার অনুরোধের এক পর্যায়ে রানা ও রানা সমর্থকদের দিকে কোথা থেকে ঢিল এসে পড়ে। আর তখনি পরস্পর ঢিল মারা থেকে শুরু হয় চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি, এরপর শুরু হয় লাঠি সোটা নিয়ে মারামারি। এসময় যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী মাঈনুর ইসলাম রানা ( ৩৫), সমর্থক শাকিল (৩০), সভাপতি প্রার্থী তৌহিদুল ইসলামের সমর্থক যুবলীগ কর্মী বাবলু ( ৩২), মিজান ( ৩০), কামরুল ( ২৮), সতত বড়ুয়া ( ৩২), পাভেল ( ( ২৯), নুর খান ( ৩২), বাবু ( ৩৩), সাধারন সম্পাদকপ্রার্থী আশরাফুল কামাল মিঠুর পক্ষের যুবলীগ কর্মী রিপন ( ৩০), সজিব ( ৩০), আপেল ( ২৮), জিসান( ৪০), নোমান ( ৩২) সহ অন্তঃত ২৫ যুবলীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত আহতদের কয়েকজন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে অনেক যুবলীগ নেতাকর্মীকে রক্তাক্ত দেখতে পেয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন- এটি ষড়যন্ত্রের অংশ। এই সমাবেশ পন্ড করার জন্যই কেউ এভাবে এমন বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে। এবিষয়ে তদন্ত করেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সমাবেশের চারদিকেই সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তাই ঘটনার রহস্য বের হয়ে যাবে। যুবলীগের আহ্বায়ক মোস্তফা মানিক বলেন এমন ঘটনা অনাকাংখিত।
ওদিকে সীতাকুণ্ডে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের আয়োজিত সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার সকাল ১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সীতাকুণ্ড পৌরসভা ও আশপাশের এলাকাজুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়। দুই গ্রুপ পৃথক দুইটি স্থানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা যুবলীগের দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির শংকা রয়েছে। তাই পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, যা রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ’
এদিকে ১৪৪ ধারা জারির পর বিকেলে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা যুবলীগ। এসময় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহাজাহান বলেন, অদৃশ্য শক্তির ইশারায় জীবনে কখনো যুবলীগ করেনি ওই রকম এক ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে সমাবেশ বন্ধ করা হয়। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ নেতা আকবর হোসেন রিজভি, শাহ কামাল চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম জসিম, সাইদুল ইসলাম, প্রতাপ নাথ, আনিসুল হক আরিফ, আলাউদ্দিন আল মামুনসহ যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহজাহানের নেতৃত্বে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ও সহ সভাপতি নুর সোলেমান সেলিম সীতাকুণ্ড উত্তর বাজার এলাকায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ আয়োজন করে। সেলিমের নেতৃত্বে গ্রুপটি র্যালি করতে মানা করার পরও তারা করতে অনড় থাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলা প্রশাসন থেকে পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহাজাহান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম জসিম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যুবলীগ সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজন করে। সমাবেশ উপলক্ষে প্রতিটা ইউনিয়নে কর্মিসভা করা হয়। কিন্তু পুলিশ বিনা কারণে একটি পক্ষকে খুশি রাখার জন্য সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। সারাদেশে যেখানে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশ হচ্ছে সেখানে সীতাকুণ্ডে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
তারা আরও বলেন, নুর সোলেমান সেলিম উপজেলা যুবলীগের কোন দায়িত্বে নেই। নেই কোন পদ পদবিও। কিন্তু তার দেয়া অভিযোগে সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করার পূর্বে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি দাবিদার নুর সোলেমান সেলিম বলেন, সীতাকুণ্ডের গণমানুষের নেতা সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়াকে দাওয়াত না দেওয়ায় তিনি পৃথক সমাবেশের আয়োজন করেছেন। এতে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় উভয় সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, মাত্র ২০০মিটারের মধ্যে যুবলীগের দুই পক্ষ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভার আয়োজন করায় আইন-শৃক্সখলার অবনতির আশংকা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। তাই সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
এদিকে নির্ধারিতস্থানে সভা-সমাবেশ করতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সীতাকুণ্ড যুবলীগের উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবাষির্কী পালন করা হয়।