মীরসরাইয়ে আলো আঁধারির রহস্যময় টানেল মেলকুম

মীরসরাই প্রতিনিধি | রবিবার , ৭ মে, ২০২৩ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রয়েছে মীরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকায় আলো আঁধারির রহস্যময় প্রাকৃতিক টানেল মেলকুম। এই রোমাঞ্চকর মেলকূপ যা স্থানীয়ভাবে মেলকুম নামে পরিচিত। এই মেলকুমের পরতে পরতে আছে রোমাঞ্চকর অনুভূতি।

মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় গ্রামের রেললাইন পার হলে মেঠো পথ ধরে বালি পাথরের ছড়ার ঝিরিপথ। পূর্ব দিকে কিছুদূর গেলে চারপাশে নানান সবজির ক্ষেত। হাঁটতে হাঁটতে ঝিরি পথে গেলে জঙ্গল। দৃষ্টির সীমানায় উঁচু উঁচু পাহাড়। দিগন্তছোঁয়া বৃক্ষরাজি। বন্য মোরগের ছুটে চলা। যেতে যেতে চোখে পড়বে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণা। আলো ছায়ার খেলায় স্বচ্ছ পানি কখনো কখনো গাঢ় নীল মনে হবে। যেতে যেতে পাহাড় সবুজ অরণ্যের মাঝে বিভিন্ন বুনোফুলের সৌন্দর্য বিমুগ্ধ করবে পর্যটকদের। চোখের সামনে উড়ে বেড়াবে রং বেরঙের ঘাস ফড়িং, প্রজাপতির ঝাঁক, পানিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে এসে খেলবে ঝিরির ছোট মাছ। তারপর দেখা মিলবে গন্তব্যের মেলকুম। গা ছমছমে পরিবেশ এ যেন আলী বাবা চল্লিশ চোর গল্পের সেই চিচিং ফাঁক পাহাড়ের সুড়ঙ্গ! কূপের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে পড়বে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ কঠিন সরু পিচ্ছিল পথ, আলো আঁধারির রহস্যময় প্রাকৃতিক টানেল। পাহাড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে কখনো হাঁটুসমান, কখনোবা বুক ছাপিয়ে গলা পর্যন্ত পানি কেটে এগিয়ে যেতে হবে। মেলকুমের ভেতরে কোথাও কোথাও দিনের আলো চরমভাবে পরাস্ত, যেন ভৌতিক পরিবেশ। যতই এগোবেন ততই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে থাকবে। পায়ের নিচে পানি, পিঠ ঠেকেছে পাহাড়ের দেয়ালে। পথটা দুই পাহাড়ের মধুর আলিঙ্গনে এতটাই সরু মাঝে মাঝে দেহগুলো আটকে যায়। ওপরে এক ফালি আকাশ।

মেলকুমের নামকরণ প্রসঙ্গে স্থানীয় সজীব দাশ, মো. মহিউদ্দিন, সজল ও প্রদীপ নাথ বলেন, এই ঝিরিকে বলা হয় বারমাসি সোনালিয়া ছড়া। এই বারমাসি ছড়ার সংযোগস্থল হলো মেলকুম। ২০ বছর পূর্বেও এলাকার বয়জ্যোষ্ঠরা কূপে মেল লতার রস ঢেলে দিলে মাছ মৃত কিংবা সংজ্ঞা হারিয়ে ঝিরি পথে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তো। এভাবে মাছ শিকারের জন্য মেল লতার ব্যবহার করতে করতে এই কূপ পরিচিতি পায় মেলকুম নামে।মেলকুমে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তামিম বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন ট্রেইলে ঘুরেছি। তবে সৌন্দর্য্যে মেলকুম একটু আলাদা হলেও ততটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

স্থানীয় জোরারগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার বলেন, এই মেলকুম ও ঝিরির পানির দ্বারা শুস্ক মৌসুমে আমাদের এলাকায় শস্য উৎপাদন ও চাষাবাদ চলে। এছাড়াও মেলকুমে সৃষ্ট মাছ স্থানীয়রা শিকার করে। পাহাড় ও ঝিরির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ছুটে আসছেন। পর্যটন কর্তৃপক্ষ যদি উদ্যোগ গ্রহন করে তাহলে আমরা ভবিষ্যতে আরও একটি পর্যটন কেন্দ্র ও সেচ প্রকল্প পাবো।বারৈয়াঢালা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার কে. এম আলতাফ হোসেন বলেন, মেলকুম ট্রেইল পর্যটন স্পট হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি না দিলেও এই ট্রেইল দেখতে প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। গাইড ছাড়া ঘুরতে যাওয়ায় অসর্তকতা বশত অনেকে রাস্তা ভুলে পাহাড়ে হারিয়ে যান। পরে ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ ও বনকর্মীরা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। দুর্ঘটনা এড়াতে এই ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় চুলার আগুনে পুড়ল ঘর
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ার কচুয়াই গৃহবধূ জেরিন আক্তারের খুঁনিদের ফাঁসির দাবি