মীরসরাইয়ে ১০ হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৪ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

ফেনী নদীর তীরবর্তী মীরসরাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার ও ব্যক্তিগত মানবিক আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কেউ খাবার, পানিসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করলেও এখনো হাজার হাজার মানুষ খাবার সুবিধার আওতায় আসেনি।

ইতোমধ্যে মীরসরাই উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিভিন্‌্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী টিম পর্যাপ্ত পরিমাণে উদ্ধার সরঞ্জাম, নৌকা, খাবার, ওষুধ ইত্যাদি নিয়ে গতকাল শুক্রবার দিনভর দুর্গত এলাকায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। সহস্র স্বেচ্ছাসেবী যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে মীরসরাই উপজেলার দুর্গত এলাকায়। কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় আশ্রয় দিয়েছে বন্যাদুর্গত মানুষদের। স্বেচ্ছাসেবী জিয়া উদ্দিন বাবলু জানান, আমাদের বারইয়ারহাটস্থ খান সিটি সেন্টারসহ ৪টি প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের প্রবাসী চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম খান সকলের জন্য খাবার দাবারসহ সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন। করেরহাটের স্বেচ্ছাসেবী কামরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে করেরহাট, জোরারগঞ্জ, বারইয়ারহাট এলাকার বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসায় অনেক মানুষকে পৌঁছানো হয়েছে, আমাদের অনলাইন আহ্বানে শত শত স্বেচ্ছাসেবী মানুষ গ্রামে গ্রামে নৌকা দিয়ে উদ্ধার ও খাবার সরবরাহ করছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল নাগাদ এই উপজেলার প্রায় সকল মানুষেরই নিরাপত্তায় সফল হলেও বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়া মানুষের জন্য এখনো পর্যাপ্ত খাবার, পানি, ওষুধ প্রয়োজন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেল নাগাদ ও ফেনী নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার ওপর অবস্থান করছিল। বিকেলে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কোথাও পানি কমে আসার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল শুক্রবার বৃষ্টি বন্ধ হয়ে রোদ উঠায় সকলের মনে আশা জেগেছে। এভাবে স্বাভাবিক আবহাওয়া থাকলে শীঘ্রই পানি কমে যাবে। ইতোমধ্যে জানা গেছে, মীরসরাইর করেরহাটের আমলীঘাট, অলিনগর, হিঙ্গুলি, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে গতকাল শুক্রবার নাগাদ কিছুটা কমে আসছে। তবে করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর গ্রাম, কাটাগাং, হিঙ্গুলি ইউনিয়নের আজমনগর, পূর্ব আজমনগর ও খিলমুরালী, মিনাবাজার, আনন্দবাজার গ্রামেও গতকাল শুক্রবার নাগাদ বন্যার পানি কমেনি। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে আছে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মীরসরাইয়ের মহামায়া লেকের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি ওঠে যাওয়ায় স্লুইসগেটের সবগুলো দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে উপজেলার দুর্গাপুর, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, উপজেলার ফেনী নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে আটকা পড়েছেন। সময় মতো আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ায় তারা বিপদে রয়েছেন। গতকাল শুক্রবারও উদ্ধার করা হয়েছে অবশিষ্ট আটকে থাকা মানুষদের। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় পাহাড়ি এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধস, ২০ বসতবাড়ি বিলীন
পরবর্তী নিবন্ধপিআইবি মহাপরিচালকের দায়িত্বে আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন