মীরসরাইয়ে এই মোটরসাইকেলে হেলমেটবিহীন চার অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণ দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের তিনজনই ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতদের মধ্যে দুইজন আবার আপন চাচাতো ভাই। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোটকমলদহ ইউটার্নে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তারা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে একটি কাভার্ডভ্যানকে ওভারটেক করে যাওয়ার পর সামনে একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সামনে পড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। অন্যদিকে গতকাল রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী বাজার নামক এলাকায় বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন দুই সিএনজি টেক্সির যাত্রী।
মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলার কমলদহ এলাকায় দুই চাচাতো ভাইসহ তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে তাদের বন্ধু অপর আরোহী। নিহতরা হল– মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হোসেনের ছেলে মো. আকিব (১৭), একই এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে জনি (১৬) ও একই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের উত্তর ওয়াহেদপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইমাম হোসেন (১৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কমলদহ বাইপাস পার হওয়ার সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক দেখে ব্রেক করতেই উল্টে যায় মোটরসাইকেল। ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই তিনজন প্রাণ হারান। এ সময় আরও একজন আহত হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা সবাই বাইপাস পার হয়ে নিজামপুর যাচ্ছিল।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের নিজামপুর তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মাসুদ রানা বলেন, উক্ত চার তরুণ বেপরোয়া গতিতে একটি কাভার্ডভ্যানকে ওভারটেক করাকালে ইউটার্নের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক দেখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনই নিহত হয়। আহত অপর একজনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরা সকলেই কাছাকাছি বয়সের। এদের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আবার নিহত আকিব ও জনি চাচাতো ভাই হয়।
দুর্ঘটনার বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, মোটরসাইকেলটিতে চারজন আরোহী ছিল। আবার কারোই হেলমেট ছিল না। তাদের দ্রুত গতির এ্যাপাচি মোটরসাইকেলের (চট্টমেট্রো মেট্রো ল ১৭–০২২৩) সামনের অংশ ভেঙে দুমড়ে–মুচড়ে যায়। ওয়াহেদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ জানান, নিহতদের নামাজে জানাজা নিজগ্রামে বাদে মাগরিব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী বাজারে যাত্রীভর্তি একটি সিএনজি টেক্সি সড়কের পাশে ধারক দেয়াল নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত একটি মেশিনের পেছনে দাঁড় করান চালক। এমন সময় পেছন দিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি যাত্রীবাহী বাস সিএনজি টেক্সিটিকে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে–মুচড়ে যায় ও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দুই যাত্রী। ওই সময় আহত হয়েছে চালক ও অপর তিন যাত্রী। এরমধ্যে আহত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন পরী চাকমা (৪৮) ও গুরিমিলে চাকমা (৫০)। আহতরা হলেন সিএনজি চালক পিন্টু চাকমা (২২), রিপন চাকমা (৪০), রিকন চাকমা (২৬) ও পুরি চাকমা (৪৮)। হতাহত সকলেই রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের যৌথ খামার এলাকার বাসিন্দা। শনিবার দুপুরে যৌথ খামার এলাকা থেকে এক সঙ্গে রাঙামাটি শহরে যাচ্ছিলেন তারা।
জানা গেছে, সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের যৌথ খামার এলাকা থেকে সিএনজি টেক্সিযোগে রাঙামাটি শহরে যাচ্ছিলেন যাত্রীরা। অন্যদিকে ঘাতক বাসটি চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করছিল। বাস চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টেক্সিটিকে ধাক্কা দেওয়ার এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মুহাম্মদ শওকত আকবর জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন মারা গেছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছে। একজন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।