মীরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট পৌর এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলায় বিএনপি–যুবদলের ১০ নেতা, অন্তঃসত্তা নারী ও শিশুসহ দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার জের ধরে গভীর রাতে বিএনপির পাঁচ নেতার ঘরবাড়িতে হামলা ও লুট, আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং মারধরের ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বারইয়াহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিটন ও বর্তমান সভাপতি দিদারুল আলম মিয়াজীর দুই গ্রুপের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্বের জের ধরে দফায় দফায় হামলা, পাল্টা হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রাত ৯টার দিকে স্থানীয় বাজারে দিদারুল আলম মিয়াজী ও তার ছোট ভাই ইকবাল হোসেন মিয়াজীর ওপর হামলা করে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এর জের ধরে রাত ১২টার দিকে কতিপয় হামলাকারী অতর্কিতভাবে বারইয়াহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিটন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম মামুন, যুবদল নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু এবং মনজুর হোসেন সুমনের বাড়ির দরজা–জানালা, কাঁচের গ্লাস, আসবাবপত্রসহ ঘরের সকল সরঞ্জাম ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেয়। লিটনের ঘরের সামনে রাখা যুবদল কর্মী সুমনের মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় হামলাকারীরা কিছু নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানায় গৃহকর্ত্রীরা। ঘটনার পর রাত ১টা নাগাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মীরসরাই উপজেলাস্থ সেনাবাহিনীর টিম ও জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।
এই বিষয়ে বিএনপি নেতা মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন যুবদল নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলুকে পিটিয়ে আহত করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর আবার বিনা কারণে গাড়িচালক জয়নাল আবেদীন (৫৫), বিএনপিকর্মী ইমাম উদ্দিন (৩০), মনজুর হোসেন সুমন (৩০), আমার বৃদ্ধ চাচী মনোয়ারা বেগম (৬০) ও অন্তঃস্বত্ত্বা গৃহবধূ রাইসা আক্তারকে (৩০) আঘাত করে গুরুতর আহত করে। ওরা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, আমার ছোট ভাই ইকবাল হোসেন মিয়াজী (৩৮) ও আমার উপর হামলার কারণেই ঘটনার সূত্রপাত। পরপর এ দুই হামলার জন্য নেতাকর্মীরা আর শান্ত থাকতে পারেনি। তিনি বলেন, ওরা আমার ভাইকে এতো বেশি জখম করেছে যে সে এখন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রতিপক্ষরা আমার ছোটভাইসহ মিনহাজ উদ্দিন টিটু (৩৩), ঝুমন (৩২), বাদশা (২২), রিয়াজ (২৪) ও নোমানকে (২৪) পিটিয়ে আহত করেছে।
পাঁচ বিএনপি নেতার বাড়িঘরে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার ভাই ও আহতদের নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তাই রাতের ঘটনা পরে জেনেছি। ভাইকে পিটিয়ে আহত করলেও এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে রাতে হামলার শিকার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী আসমা আক্তার মিলি ও বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম বলেন, রাতে অতর্কিত এসে এমনভাবে হামলা করেছে আমাদের ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র, ঘরের বেড়া সব ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। আমাদের আঘাত করাসহ এতিম শিশু জুলেখার (১০) গলাও টিপে ধরেছে তারা। মধ্যযুগীয় কায়দায় এমন বর্বরতার বিচার চান তারা।
মাঈন উদ্দিন লিটনের পিতা প্রবীণ বিএনপি নেতা খায়েজ আহমদ বলেন, বাজারে কি হয়েছে তার জবাব হাটে–বাজারেই হতো। কিন্তু বাড়িঘরে এমন বর্বরোচিত হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এই বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী এবং ঘটনাস্থল বারইয়াহাট এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে সব অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়। আমরা জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ সকলে এই বিষয়ে সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, খবর পেয়ে রাতেই সেনাবাহিনীসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পাল্টা হামলা যেন না হয় সেজন্য উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।