মীরসরাইয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ৬২ প্রাথমিক বিদ্যালয়

১০৮টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে ৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অনেক স্কুলে নামে মাত্র দুএকজন শিক্ষক। জনবহুল একটি গ্রামীণ বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকও পোস্টিং নেই। সবাই নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে বদলী হয়ে যাওয়ায় অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক এসে কোনভাবে ক্লাস চলছে। এমনভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। জানা যায়, মীরসরাইয়ে ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। চাকরি থেকে অবসর এবং মৃত্যুজনিতসহ বিভিন্ন কারণে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য হয়। যা পরে আর পূরণ করা হয়নি। এছাড়া ১০৮টি সহকারী শিক্ষক পদও শূন্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ওই পদগুলো শূন্য থাকায় পাঠদানসহ দাপ্তরিক নানা কাজে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি সার্বিক শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও মীরসরাই পৌরসভায় ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে করেরহাট, চিনকি আস্তানা, জোরারগঞ্জ, বামনসুন্দর, ঝুলনপোল, রঘুনাথপুর, মীরসরাই সদর, আবুতোরাব ও সরকারহাট ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্লাস্টারে একজন করে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। নয়টি ক্লাস্টারের জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছে চারজন। ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আট থেকে ১০ বছর হলো উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসর, মৃত্যু ও সরাসরি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ না থাকায় উক্ত পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। আর ওই সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই প্রধান শিক্ষকের পদ সামলাচ্ছেন।

উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের এক অভিবাবক আবুল কালাম বলেন, আমার এলাকার পশ্চিম সাকারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকও সেখানকার জন্য নিয়োগকৃত নেই। সকলেই বদলি হয়ে চলে যাবার পর বর্তমানে অন্যান্য স্কুল থেকে সেখানে ক্লাস করতে যায় ৩ জন শিক্ষক। এভাবে গেস্ট টিচার দিয়ে প্রাথমিক স্কুল চললে শিক্ষার সার্বিক অগ্রগতির নমুনা কেমন হতে পারে সবাই বুঝতে পারছেন।

আবার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। আবার প্রধান শিক্ষকের একটি পদ শূন্য থাকার মানে বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা। এছাড়া নিয়মিত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে দাপ্তরিক কাজসহ বিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারেন, একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে না।

জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাত্র একবার সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিলেও এরপর গত এক যুগে ও আর সরাসরি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ প্রায় এক দশকেও আর পূরণ হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওই সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ চালানোর জন্য জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছে।

মীরসরাই উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের দিয়ে সকল শূন্য পদ পূরণ করলেই এই সংকট নিরসন সম্ভব। তিনি বলেন, শীঘ্রই সরকারিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জেনেছি। আবার নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন। সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ সর্বাগ্রে প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুরাদনগরে ভিডিও ছড়ানোর নেপথ্যে দুই ভাইয়ের বিরোধ
পরবর্তী নিবন্ধতাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, বর্শা, বল্লম, তরবারির ব্যবহার নয়