মীরসরাই উপজেলায় বন্যা ও বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ফসলের মাঠে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভায় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ, আমন ও মৌসুমী সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষকরা আবার মাঠে নেমেছেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে ফসলের মাঠ নতুন করে সাজাতে। কিন্তু যেসব নিচু মাঠে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে সেখানে সম্ভব হবে না আবাদ। এমন অনাবাদি জমি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২০ শতাংশ জমিতে।
উপজেলার খৈয়াছড়া গ্রামের মসজিদিয়া গ্রামের ফসলের মাঠে শুক্রবার সকালে কাজ করছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বন্যায় ডুবে মরে যাওয়া রোপা আমনের চারাগুলো তুলে সেখানে নতুন চারার গোছা রোপণ করছিলেন। এই বন্যায় কেমন ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ৩২ গন্ডার ৩টি জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে আমনের চারা লাগিয়েছিলাম। অর্ধেক চারা কোনোভাবে বেঁচে উঠেছে। বাকি অর্ধেক জমির চারা আবার নতুনভাবে লাগিয়ে নিচ্ছি। এতে প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো আবার খরচ হচ্ছে। আশা করছি ফলন ভালো হলে এই ক্ষতি পুষিয়ে আসবে।
হাজীশ্বরাই গ্রামের কৃষক ওমর আলী (৪৫) বলেন, আমার করলা ক্ষেতের সকল গাছই মরে গেছে। ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে ক্ষেতে। এখনো পুঁজি উঠে নাই। কি আর করা নতুনভাবে ধারদেনা করে কাজ শুরু করে দিয়েছি।
আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহেদ কোরাইশী বলেন, গ্রামের কৃষকদের মধ্যে অনেকের ডুবে যাওয়া আমনের চারা মরে একদম শেষ হয়ে গেছে। প্রান্তিক চাষিরা এমনিতেই ধার কর্য নিয়ে চাষ করে। এই মুহূর্তে সরকারের প্রয়োজন এসব কৃষকদের পাশে থাকা। মীরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৫৫৫০ হেক্টর রোপা আউশ, ১২২০ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৪৮২০ হেক্টর রোপা আমন, ১২৫ হেক্টর শরতকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অনেকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মাঠে নেমেছেন। তবে এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন। কিন্তু কিছু এলাকায় ফসলের মাঠ এখনো জলাবদ্ধ। এমন ২০ শতাংশ কৃষক ও জমি ক্ষয়ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা ও করতে পারবেন না। কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে কোনো প্রকার সহযোগিতা বা প্রণোদনা হবে কিনা জানতে চাইলে আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বাকিটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার বিষয়।