মীরসরাইয়ে ক্ষীণ হচ্ছে মহিষের পাল

হ্রাস পাচ্ছে দুধ-দধিসহ নানান সুস্বাদু খাবার

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ আমিষ ও প্রোটিনের অভাব পূরণ করা চট্টগ্রামের প্রাচীনতম ঐতিহ্যময় স্মৃতি বিজড়িত মহিষ এবং মহিষের দুধদধিসহ নানান সুস্বাধু খাবার উপকরণ হ্রাস পাচ্ছে দিনে দিনে। এক দশক পূর্বে ও লক্ষ প্রায় মহিষ এর অবাধ বিচরণক্ষেত্র ছিল এখানকার উপকূলাঞ্চলে। বর্তমানে যা ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত শিল্পাঞ্চলের প্রভাব বৃদ্ধির দরুণ হ্রাস পাচ্ছে এই প্রাকৃতিক সম্পদ, তবে বিকল্প উপায়ে ও এর অভয়ারণ্য রক্ষা বা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এক সময় বাংলাদেশে ৪২ লাখের মতো মহিষ থাকলেও বর্তমানে তা ছয় লাখে ঠেকেছে। অথচ গরুর চেয়ে মহিষের দুধ ও মাংস সুস্বাদু এবং বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু প্রচারণা না থাকায় আমরা কেউ মহিষের মাংস খেতে চাই না। আবার মহিষের দুধের চা, মহিষের দধি, মহিষের দুধের ছানার মিষ্টিকে বিশেষভাবে আমরা সকলেই গুরুত্ব দেই কিন্তু। সচরাচর পাওয়া যায়না বলে আগ্রহ থাকলেও সকলে তা ক্রয় করতে পারেন না। এখনো চরাঞ্চলের অনেক স্থান মহিষের দুধের চা, দধি, মিষ্টির জন্য সমাদৃত।

মীরসরাই উপজেলার একদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল। অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যতিরেকে ও ফেনী নদীর দুই তীরে এখনো রয়েছে বিস্তীর্ণ জলাশয় ও মহিষ পালনে উপযোগি ব্যাপক এলাকা। এই অঞ্চলের মহিষের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এখনো অনেক মহিষ পালক মহিষের দুধ বিক্রি করে পরিবার ও জীবিকা নির্বাহ করে। আবার মহিষের দুধ ও দধি বিক্রি করে চলে অনেক পরিবার। আরো ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই নিরাপদ আমিষের প্রসারতা বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে না কেউ।

উপজেলার বামনসুন্দর এলাকা থেকে মীরসরাই সদরে এসে নিয়মিত মহিষের দধি বিক্রেতা যুবক জাহেদ হোসেন (২৬) হোসেন থেকে জানা যায়, সে প্রতিদিন নিজ এলাকার বিভিন্ন গাভী মহিষের গৃহস্থ থেকে ১৬০ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। সেই দুধ থেকে প্রায় এক কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত মাটির পাতিলে ১৫০টির মতো দধি বানিয়ে ছিক্কায় ঝুলিয়ে ভার বয়ে কাঁধে করে নিয়ে আসে সদরে। প্রতিটি দধিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা লাভ হয়। এতে দৈনিক প্রায় ১০০০ থেকে দেড় হাজার টাকা উপার্জন করে সে। তার বাবা বাদশা মিয়াও একজন দধি বিক্রেতা। এভাবেই চলে তাদের সংসার। মহিষের দধি বিক্রেতাদের থেকে জানা গেছে একসময় উপকূল এলাকা জুড়েই ছিল তাদের চারণভূমি। এখন সেখানে অর্থনৈতিক জোন স্থাপিত হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন মহিষের চারণভূমির জন্য জন্য অন্যত্র স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে মহিষের দুধ ও মাংস খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের রুচির ক্ষেত্রে যেমন মানসিকতার পরিবর্তন দরকার তেমনই বাজারে মহিষের মাংসকে গরুর মাংস বলে চালানোর বিরচদ্ধে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান। বরং মহিষের মাংস গরুর মাংস থেকে উত্তম এজন্য যে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ঝুকি কম মহিষের মাংসে।

মীরসরাই উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জাকিরচল ফরিদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদশক পূর্বে ও এখানকার উপকূলীয় এলাকার চারণভূমিগুলোতে লক্ষ প্রায় মহিষ ছিল। সর্বশেষ বর্তমানে যা ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে নিরাপদ আমিষ ও বিভিন্ন সুস্বাধু খাবারের জন্য মহিষ লালনপালন এর প্রসার খুবই প্রয়োজন। আমাদের পক্ষ থেকে সমকল মহিষপালনকারীদের বিভিন্ন পর্যায়ের সেবার জন্য সবসময় চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু এই বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ও এই প্রাচীনতম প্রাকৃতিক সম্পদের বিকাশে আরো অনুকূল সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, গবাদি পশু মহিষ আমাদের মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় চারণভূমি রক্ষাসহ ইতিমধ্যে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামীতে এই বিষয়ে আরো ব্যাপকতর উদ্যোগ ও গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভা
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান, লাখ টাকা জরিমানা