মীরসরাইয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিকে পাকানো হচ্ছে কলা

ইথোফেন ব্যবহৃত কলায় পুষ্টিগুণ থাকে না, ঝুঁকি বাড়ায় ক্যান্সারের : বিশেষজ্ঞ

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট, জোরারগঞ্জ, বড়তাকিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের কলার আড়তগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা। কখনো কখনো ভেজাল বিরোধী অভিযান হলেও ফলের হাটগুলোতে অভিযান হতে দেখা যায়নি। তবে প্রশাসন বলছে, এখন থেকে অভিযান হবে। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় বড়তাকিয়া বাজারের কলার আড়তদার আক্তার হোসেনের সাথে। তিনি বললেন, আগের চেয়ে বিক্রি এখন অনেক কম, আগে বছরে ৪৫ লাখ টাকার কলাও বিক্রি করেছি। গেল দুবছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার চালান করাও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

এসব কচি ও কাঁচা কলা কি মেডিসিন দিয়ে পাকানো হয় প্রশ্নে তিনি মেডিসিন প্রয়োগের বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ। অথচ আড়তের এক পাশে ঠিকই কালো প্লাস্টিক পলিথিন মোড়ানো অর্ধশতাধিক কলার ছড়া মেডিসিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। অদূরেই তার মেডিসিন দেওয়ার বালতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দেখা যাচ্ছিল। কোন মেডিসিন দেওয়া হয় না জানালেন আড়তদারের অপর পার্টনার মামুন মিয়া ও। কিন্তু সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা কলা সংগ্রহ করে আনেন এইসব পাইকাররা। মীরসরাই উপজেলার মীরসরাই সদর, বারইয়াহাট বাজার, মিঠাছরা, আবুতোরাবসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল বাজারেই এইভাবে বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা। পরে বাজার থেকে ইথোফেন রাসায়নিক কিনে তা এক বালতি পানির সঙ্গে মিশিয়ে তাতে কলার ছড়াগুলো চুবিয়ে রাখেন। এরপর কলাগুলো প্লাস্টিকের ঝুড়িতে রেখে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। দুদিনেই কলাগুলো পেকে সুন্দর রঙ ধারণ করে। শুধু মীরসরাই নয় চট্টগ্রামের সর্বত্র ও সারা দেশেই অপরিণত কলা পাকাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিকর এই রাসায়নিক ইথোফেন ব্যবহার করছেন। এ রাসায়নিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল পাড়ার পর তাতে সরাসরি ইথোফেন প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এটি করা হলে রাসায়নিকটি ফলটিতে থেকে যায়। বিশেষ করে সরাসরি প্রয়োগের ফলে কলায় ইথোফেন থেকে এক ধরনের অ্যালডিহাইড উৎপন্ন হয়। কলার মাধ্যমে এ রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে তা মানুষের মস্তিষ্কে অঙিজেন পরিবহনে বিঘ্নসৃষ্টি করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, কলা একটি পুষ্টিকর ফল। পরিণত কলা ঘরে তিনচারদিন রাখার পর প্রাকৃতিক নিয়মে পেকে যাবে। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত মুনাফার লোভে পরিণত হবার আগে কেটে এনে সেসব কলা ইথোফেনের সাহায্যে পাকান। এসব ইথোফেন মিশ্রিত কলায় কোনো পুষ্টিগুণ থাকে না।

স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইথোফেন দিয়ে পাকানো কলা খেলে অ্যাসিডিটি বাড়ার পাশাপাশি বদহজমের আশঙ্কা থাকে। যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা নেই, তারাও নতুন করে এতে আক্রান্ত হতে পারেন। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানুষের যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

মীরসরাই উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ইথোফেন ফল পাকাতে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ফল গাছে থাকা অবস্থায়ই স্প্রের মাধ্যমে তা প্রয়োগ করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময় পর ওই ফল গাছ থেকে পাড়তে হয়। এ নিয়ম কলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত মুনাফা লাভের আশায় অপরিণত কলা গাছ থেকে পেড়ে তাতে ইথোফেন প্রয়োগ করছেন। এটি একেবারেই উচিত নয়।

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর বর্তমানে ইথোফেন বাজারজাতের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে নতুন করে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না।

এর নিয়ন্ত্রণ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এই বিষয়ে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন আজ
পরবর্তী নিবন্ধ৬১ উপজেলার মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করার পরিকল্পনা সরকারের : ফারুক-ই-আজম