মীরসরাই উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সামান্য বৃষ্টিপাতেই এসব সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না। মীরসরাই উপজেলার ঠাকুরদীঘি থেকে ছত্তরভূঞার হাট সড়কের দুর্গাপুর বাজার পেরিয়ে গেলেই দেখা যায়, রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্ত, এক কিলোমিটারজুড়ে সড়কের ১০ ফুটও ভালো নেই। কংক্রিট উঠে ছোট–বড় গর্তে বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুরো রাস্তা হেঁটে চলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হেলে–দুলে কোনরকমে ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় যানবাহন। রোগী বহনে শেষ থাকে না দুর্ভোগের।
আবার উপজেলার সর্ব দক্ষিণের কমরআলী–ভূঞারহাট সড়কের দশা যেন এর চেয়েও খারাপ। জোরারগঞ্জ–মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের বেহাল দশা তো কোনভাবেই শেষ হয় না। এই সড়কটি সংস্কার করলেও ৬ মাস টিকে না। এ সড়ক দিয়েই রাতঘর চলাচল করে পানির ড্রামভর্তি মাছের ট্রাক। আর এতেই সারাবছর সড়কটি ভেজা থাকে। যার কারণে এই সড়কটি বেশিদিন ঠিকে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ছত্তরভূঞার হাট সড়কে সরেজমিনে গেলে মিনহাজ উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, প্রতিদিন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীসহ সবাইকে এই রাস্তা পাকা হওয়া স্বত্তেও জুতা হাতে নিয়ে যেতে হয়। এই দুর্ভোগ কখন শেষ হবে জানি না। সরেজমিনে দেখা যায়, জোরারগঞ্জ–মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে জোরারগঞ্জ বাজার থেকে ইছামতি মন্দির পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ খানিকটা ভালো থাকলেও, বাকি ৭ কিলোমিটার সড়ক একেবারেই চলাচলের অযোগ্য।
সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা বিষুমিয়ার হাট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে ছোট–বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় এই গর্তগুলোতে পানি জমে কাদা হয়, তখন দেখা যায় গাড়ি হঠাৎ ব্রেক করে, নিয়ন্ত্রণ হারায়। অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে গর্তেই থেমে যায়। এছাড়াও সড়কের দুরবস্থার প্রভাব পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের ওপরও। অনেকেই সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারছে না। সকালবেলা সিএনজি বা স্কুলবাসে উঠলেও সড়কের কাদা আর গর্তের কারণে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব।
স্থানীয় সিএনজি চালক দুঃখু মিয়া বলেন, সড়কের অধিকাংশ স্থানে গর্ত। প্রায়ই গাড়ি উল্টে যায়। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলে মনে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করছি। সড়কটির নিয়মিত যাত্রী কৃষ্ণ কর্মকার বলেন, সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজে এক মাসের মধ্যেই সব আবার আগের মতো হয়ে যায়। সময় ও ভাড়া দুটিই বেড়ে যাচ্ছে। ট্রাকচালক আবুল হাশেম বলেন, পণ্যভর্তি গাড়ি গর্তে পড়ে আটকে যায়; সময় ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়। ঠিকঠাক রাস্তা থাকলে সময়মতো মালামাল পৌঁছানো যেত।
ছত্তরভূঞার হাট সড়কের বিষয়ে মীরসরাইয় উপজেলা প্রকৌশলী রনি সাহা বলেন, এই সড়কটি টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। কমরআলী সড়ক নিয়ে তিনি বলেন, সেটি এলজিইডির সীতাকুণ্ডের অধীনে তবে সেখানেও টেন্ডার সম্পন্ন হয়ে কাজ শুরু হবার অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।
মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক নিয়ে চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, জোরারগঞ্জ–মুহুরীপ্রজেক্ট সড়কসহ মোট ১৮ কিলোমিটারের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। জোরারগঞ্জ–মুহুরী প্রজেক্টের ৭ কিলোমিটার অংশটি ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করে কার্পেটিংয়ের কাজ হবে। এছাড়াও মুহুরী প্রজেক্ট থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে শিল্প জোনের বেজার গেট পর্যন্ত সড়কের বাজেটও অনুমোদন হয়েছে বলে জানান তিনি।