‘মিয়া ভাই’ ফারুককে অশ্রুজলে বিদায়

| বুধবার , ১৭ মে, ২০২৩ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

সুজনসখী’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র মত সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রের নায়ক, ঢাকাই সিনেমার ‘মিয়া ভাই’ আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টায় উত্তরার বাসা থেকে ফারুকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ প্রদ্ধা জানান ঢাকা১৭ আসনের এই সংসদ সদস্যের কফিনে। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে কমোডর এমএম নাঈম রহমান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। খবর বিডিনিউজের।

এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দেওয়া হয় ফারুকের কফিনে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “চিত্রনায়ক ফারুক বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে গেছেন। আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন অবিচল, অনড় ও আপসহীন। তার থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে আদর্শের প্রশ্নে তিনি সংকটেও দিশেহারা হননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। নায়ক ফারুক তখনও ছিলেন জনপ্রিয় নায়ক। কিন্তু সে সময়ও তাঁর পেশাজীবনে ক্ষতি হবে সেটা হতেও পারত, তারপরও তিনি বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে গেছেন। কাদের বলেন, তার লাইফ ছিল কালারফুল। একদিকে নায়ক, আরেক দিকে রাজনীতি। মাঠের সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। চিত্রনায়ক ফারুকের মত সরাসরি রাজনীতির মাঠে ছিলেন এভাবে কোনো নায়ককে দেখিনি। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ। তিনি বলেন, আমার বাবা চলে গেলেন। আপনারা আমার বাবার প্রতি কোনো দাবি রাখবেন না। তার জন্য দোয়া রাখবেন। সারাজীবন বাবা মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। মৃত্যুর পর আপনারা সেই ভালোবাসা দিয়ে যাবেন। তাঁর আত্মার জন্য দোয়া রাখবেন। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ফেরদৌস, নিপুণ, জায়েদ খানসহ ঢাকাই সিনেমার নবীন প্রবীণ বহু মুখ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন।

জাসদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রয়াত এই অভিনয়শিল্পী ও সংসদ সদস্যের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে বেলা পৌনে ১টার দিকে ফারুকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। সেখনে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান এক সময়ের সহকর্মী শিল্পী, কলাকুশলীরা। বেলা সাড়ে ৩টায় এফডিসিতে জানাজার পর ফারুকের মরদেহ নেওয়া হবে চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে। বিকাল ৫টায় গুলশানে আজাদ মসজিদে আরেক দফা জানাজা হবে। পরে ফারুকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গাজীপুরের কালীগঞ্জের তুমুলিয়া দক্ষিণ সোম গ্রামে। সেখানে সোমটিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে চিত্রনায়ক ফরুককে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাদাকালো পর্দা থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনায় উজ্জ্বলএকটি নাম ফারুক। অভিনয় করেছেন ৬০টির বেশি সিনেমায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঋণের বদলে ব্যাংকে মর্টগেজ সম্পত্তির পরিমাণ বেশি ফারুকের : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধসিলেটে চন্দরপলের ছেলের ব্যাটিং ঝলক