মিয়ানমারে সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বানে প্রথমবারের মত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে।
গত বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টিও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয় প্রস্তাবে। খবর বিডিনিউজের।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাবের পেন হোল্ডার (খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনকারী এবং মূল স্পন্সর) ছিল পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। তিনমাস ধরে আলোচনা শেষে বুধবার ১২-০ ভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। ভোটাভুটি পর্বে প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো সদস্য ভোট দেয়নি বা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী কোনো সদস্য ভেটো দেয়নি। ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।
রয়টার্স লিখেছে, গত ৭৪ বছরের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রথম মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো প্রস্তাব গৃহীত হল, যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানানোর পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সামরিক জান্তার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাবটি অনুমোদন করায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একই সাথে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এতদসংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরো শক্তিশালি ও ত্বরান্বিত করবে।
প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, আজ আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একটি বার্তা দিলাম। আমরা চাই এ প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হোক, এ নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কোনো সন্দেহ থাকা উচিত হবে না। আমরা মিয়ানমারের জনগণের জন্যও একটি স্পষ্ট বার্তা আজ দিলাম, আমরা তাদের অধিকার, তাদের ইচ্ছা এবং তাদের স্বার্থকে সমুন্নত রেখেই পরিস্থিতির উন্নতি চাই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। ভোটাভুটি শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন ও নরওয়ের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার প্রশংসা করেন এবং এ সমস্যার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান।
আর বাংলাদেশ মিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বলা বাহুল্য, এই রেজুল্যুশনটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালী সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ।
এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতকে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে নিরাপত্তা পরিষদ।
বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, এ প্রস্তাবে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে ‘উল্লেখযোগ্য ভূমিকা’ পালন করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।