মিয়ানমারের দুটি মর্টার শেল পড়ল নাইক্ষ্যংছড়িতে

ঘটনাস্থলে বিশেষজ্ঞ দল ম কড়া প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ

নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ২৯ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের দিক থেকে দুটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। গতকাল রোববার দুপুরের দিকে তুমব্রু উত্তর পাড়া এলাকায় পরপর মর্টার শেল দুটি এসে পড়ে। একই সময়ে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে হেলিকপ্টার টহল দিতেও দেখা যায়। এতে স্থানীয় লোকজনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এদিকে মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করতে ঘটনাস্থলে কাজ করছে বিশেষজ্ঞ দল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ৩৫ নং সীমানা পিলারের বাংলাদেশ অংশে গতকাল দুপুরে মর্টার শেল দুটি এসে পড়ে। তুমব্রু উত্তর পাড়া মসজিদের পাশে পড়া প্রথম শেলটি ১২০ মিলিমিটারের বলে জানা গেছে। এর কিছুক্ষণ পর মসজিদের প্রায় ১০০ গজ দূরে মো. সোলায়মানের ঘরের উঠানে আরো একটি শেল পড়ে। সরেজমিনে জানা গেছে, এতে কেউ হতাহত হয়নি। মর্টার শেল পড়ার কয়েকশ গজের মধ্যে তুমব্রু ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিছু দূরে তুমব্রু বাইশারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। রয়েছে একাধিক মসজিদ, বাংলাদেশি মুসলিম ও রাখাইন পাড়া। স্থানীয় শিক্ষক হামিদুল হক ও অভিভাবক আলী আকবর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যদি ওই দুটি শেল স্কুলে পড়ত কি সাংঘাতিক অবস্থা হতো! কারণ ওই সময় স্কুলে ক্লাস চলছিল।
তুমব্রু সীমান্ত সংলগ্ন ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ওপারে মাঝারি ও ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের গোলাগুলি হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এতদিন পাহাড়ে গোলা ছুড়লেও রোববার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উত্তর পাড়ায় মর্টার শেলগুলো পড়েছে। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কে আছেন।
তুমব্রু এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বোরহান আজিজ বলেন, মর্টার শেল আমার বাড়ির একটু দূরে পড়েছে। পড়ার পর শব্দ হয়। প্রথমে লোহা মনে করি। পরে গিয়ে দেখি এটা দেখতে বোমার মতো। সঙ্গে সঙ্গে আমি ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করি।
স্থানীয় লোকজন জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের তুমব্রু, বাইশারী, ওয়ালিদং এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। গতকালও ভোর থেকে তুমব্রু সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্ধ্যার পরপর মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির বোমা বিস্ফোরক দল স্পটে কাজ শুরু করেছে। তাই বিজিবির জোয়ানরা উত্তর পাড়ার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। সীমান্তে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস বলেন, মর্টার শেল জনবসতিতে এসে পড়ার খবর শুনেছি। যাচাই করে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানাব।
বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেছেন, মনে হচ্ছে মর্টার শেলগুলো আমাদের দিকে টার্গেট করে ছোড়া হয়নি। এটি খুব সম্ভব মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর গোলাগুলির কারণে আমাদের সীমান্তে এসে পড়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
ঢাকায় বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ ব্যাপার আমাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান আছে।
কড়া প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ : দুটি মর্টার শেল পড়ার ঘটনায় সরকার ‘কড়া’ প্রতিবাদ জানাবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ইউজুয়ালি এ ধরনের ক্ষেত্রে ওদের কাছে প্রতিবাদ করি আমরা। কিছুদিন আগেও এই রকম কয়েকটা খবর আমরা পেয়েছিলাম। তো, আমরা আবার ওদেরকে কড়া প্রতিবাদ করব যে, আমাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যাতে এ ধরনের কোনো কিছু না হয়। এটি দুর্ঘটনা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক সিভিল সার্জন সরফরাজ খান কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে শো’কজ