মিষ্টি আলুতে মিষ্টি হাসি

মীরসরাইয়ে বাম্পার ফলন, দাম নিয়েও খুশি কৃষকরা

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলায় এবার মিষ্টি আলুর ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এ আলু যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের বড় হাট বড়দারোগারহাট ও মিঠাছরা বাজারে রেকর্ড পরিমাণ মিষ্টি আলু বিক্রি হয়েছে বলে কৃষকরাই জানিয়েছেন।
এবার উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া আরো ৫ হেক্টর চাষ হয়েছে গোল আলু। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন চাষিরা। তবে স্থানীয় জাতের আলুর ফলনই বেশি হয়েছে বলে জানান আলু চাষিরা। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় মিষ্টি আলুর চারা রোপণ। ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ব হয়। আর চৈত্র ও বৈশাখ মাস আলু তোলায় ব্যস্ততা থাকেন চাষিরা। বৈশাখের এই সময়ে অনেক আলু চাষিই ব্যস্ত তাদের আলু তুলে হাটে নিতে। আগাম বৃষ্টি নেই তাই আলু ক্ষেতের কোনো প্রকার ক্ষতিও হয়নি এবার।
একসময় মিষ্টি আলুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল কুমিল্লার বুড়িচং। এছাড়া চন্দনাইশেও আলু চাষ হয় প্রচুর। তবে এখন মীরসরাইয়ে বাড়ছে আলু চাষ। সম্প্রতি খৈয়াছরা মাঠে দেখা গেছে, ক্ষেত জুড়ে চলছে মিষ্টি আলু তোলার উৎসব। রোদের তেজ উপেক্ষা করে পুরুষরা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করছেন। কোথাও কোথাও মহিলারাও আলু কুড়িয়ে এক জায়গায় স্তুপ করে রাখছেন। মিষ্টি আলু নিতে আসা বেপারিরা ক্ষেতে বসেই আলু মেপে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে নিয়ে রাখছেন। কোনো কোনো কৃষক ভালো দাম পেতে নিয়ে যাচ্ছেন বড়দারোগারহাট, বড়তাকিয়া কিংবা মিঠাছরা হাটে। পশ্চিম খৈয়াছরা গ্রামের কৃষক আমিন রসুল বলেন, ১০ গন্ডা জমিতে লাল আলু রোপণে খরচ হয়েছে হাজার পাঁচেক টাকা। বিক্রি করবেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার আলু। নিজেদের পরিশ্রমের টাকা ছাড়াও কিছু লাভ থাকবে আশা করছেন। এদিকে বাজারে গোল আলুর দাম ২০ টাকা। কিন্তু মিষ্টি আলুর দাম ৪০ টাকা। সেই তুলনায় গোল আলু থেকে মিষ্টি আলুর দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।
একই গ্রামের কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, এসব জমিতে বাদাম ও মিষ্টি লাউ চাষ করতাম। এতে লাভ হতো না। পরে এ বছর আমরা মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হয়েছি। আগে যেখানে বাদাম ও মিষ্টি লাউ করে লোকসান হতো এখন লাভের মুখ দেখে আমরা খুশি। আলু বিক্রি করতে আমাদের কোনো কষ্ট করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে আলু কিনে নিচ্ছেন, এতে আমাদের আরো সুবিধাই হচ্ছে।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরাও খুশি। ফলন ও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় আগামীতে আরো অনেক কৃষক এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হলুদ আর কমলা শাঁসযুক্ত এই মিষ্টি আলু পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনে ভরপুর। সঙ্গে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দাবি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই আলু। এই আলু চোখ ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে, চামড়া ভালো থাকে, ত্বকের বয়স কমায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য শিক্ষা উপমন্ত্রীর দুটি মাইক্রোবাস
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৭ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৩০২ জন