দুর্বল হতে হতে মৃত্যুর দিকে পা বাড়াচ্ছেন লায়লা সুইফ। ৮ মাসের বেশি সময় ধরে অনশন করে আসা এই নারীকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে কোনও সময় তার হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তবু থেমে নেই তার সংকল্প। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই চলছে অনশন। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল থেকে বিবিসি রেডিও ফোর টুডে প্রোগ্রামে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৬৯ বছর বয়সী ব্রিটিশ–মিশরীয় গণিত শিক্ষিকা লায়লা সুইফ বলেন, আমি বাঁচতে চাই। খুব করে চাই। কিন্তু আমার মৃত্যুতেও যদি ছেলে মুক্তি পায়, তাহলে আমি মরতেও প্রস্তুত।
লায়লার ছেলে আলা আবদেল ফাত্তাহ যুক্তরাজ্য ও মিশরের দ্বৈত নাগরিক। মিশরের অন্যতম প্রধান বিরোধী কণ্ঠস্বর তিনি। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় কায়রোয় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন অভিযোগে তিনি প্রায় টানা কারাবন্দি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ায় আলা গ্রেপ্তার হন। তিনি কায়রোর ওয়াদি আল–নাতরুন জেলে বন্দি। খবর বিডিনিউজের।
তার সর্বশেষ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে এক ফেসবুক পোস্ট শেয়ারের অভিযোগে, যেখানে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে একজন বন্দির মৃত্যুর কথা উল্লেখ ছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, আলার সাজা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিশর কর্তৃপক্ষ তার প্রি–ট্রায়াল হেফাজতের সময় গণনায় অস্বীকৃতি জানায়। সেই থেকেই অনশনে যান তার মা লায়লা সুইফ।
ওর সাজা শেষ। তাও তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটা অনৈতিক এবং অমানবিক, বলেন লায়লা। অনশনের প্রথম কয়েক মাস শুধু হারবাল চা, কালো কফি আর স্যালাইনজাতীয় পানীয় পান করে টিকে ছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি দিনে ৩০০ ক্যালরির তরল গ্রহণে রাজি হন–যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আলা’র মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু ২০ মে থেকে তিনি আবার পূর্ণ অনশনে ফিরে গেছেন। বলছেন, এতদিনেও কোনও অগ্রগতি হয়নি।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আবার হাসপাতালে ভর্তি হন লায়লা। চিকিৎসকরা তাকে গ্লুকাগন দেন। যা ব্যবহার করা হয় রক্তে চিনির মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে। তিনি এখনও গ্লুকোজ নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তার শরীরে এখন ইলেক্ট্রোলাইট দেওয়া হচ্ছে স্রোতের মাধ্যমে। কিন্তু তার পরিবারের ভাষ্য, সপ্তাহান্তে তার গ্লুকোজ মাত্রা এতটাই কমে যায় যে তা মাপাও যাচ্ছিল না। কেউ বুঝতে পারছে না, তিনি এখনও কীভাবে জ্ঞান ধরে রেখেছেন, বলেন লায়লার মেয়ে সানা সিফ। তিনি বলছেন, তিনি মারা যাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে বিদায়ের কথাও বলছেন।