মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি: গ্রিসের অধিবাসীরা বলতো দুধের পথ

অর্ক রায় সেতু | বুধবার , ২ জুলাই, ২০২৫ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

মহাবিশ্বের অসীমতায় আমরা যেখানে বাস করি, সেটি একটি গ্যালাক্সি যার নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা। এটি একটি বিশাল ঘূর্ণায়মান গ্যালাক্সি, যেখানে রয়েছে শত শত বিলিয়ন তারা, ধূলিকণা, গ্যাস, নেবুলা, গ্রহপুঞ্জ এবং একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। আমাদের সূর্য এবং পুরো সৌরজগত এই গ্যালাক্সির একটি বাহুতে অবস্থান করছে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি একটি বারযুক্ত স্পাইরাল গ্যালাক্সি, যার কেন্দ্রে একটি ঘন তারা সমষ্টি রয়েছে এবং চারদিকে স্পাইরাল বাহুর মতো গঠন রয়েছে যেগুলো একে ঘূর্ণায়মান আকার দিয়েছে। এর ব্যাস প্রায় ১ লাখ আলোকবর্ষ এবং গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল, যার নাম ঝধমরঃঃধৎরঁং অ*, যার ভর সূর্যের তুলনায় প্রায় ৪ মিলিয়ন গুণ বেশি। আমাদের সূর্য এই কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোল থেকে প্রায় ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এটি প্রতি ২২৫২৫০ মিলিয়ন বছরে একবার গ্যালাক্সিকে ঘুরে আসে, যাকে এক ‘গ্যালাকটিক ইয়ার’ বলা হয়। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন তারা আছে বলে ধারণা করা হয় এবং এর মধ্যে অনেকগুলো সৌরজগতের মতো সিস্টেম থাকতে পারে, যেখানে পৃথিবীর মতো গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনাও থাকতে পারে। এই গ্যালাক্সিটি দৃশ্যমান আকাশে একটি দুধের রেখা বা ঝলমলে আলোর ফিতার মতো দেখা যায়, যার কারণেই প্রাচীন গ্রীকরা একে “গ্যালাক্সিয়াস” বলেছিল, যার অর্থ দুধের পথ। এই গ্যালাক্সির সঙ্গে মিল রয়েছে এমন আরও অসংখ্য গ্যালাক্সি আছে মহাবিশ্বে, তবে মিল্কিওয়ে আমাদের ‘মহাজাগতিক ঠিকানা’। এটি স্থানীয় গ্যালাকটিক গ্রুপের অন্তর্গত, যার অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, লার্জ ও স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউডসহ আরও অনেক ছোট গ্যালাক্সি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পর মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে একটি নতুন বৃহৎ গ্যালাক্সিতে পরিণত হবে। বর্তমানে মিল্কিওয়ে নিয়ে গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শক্তিশালী টেলিস্কোপ যেমন ঔধসবং ডবনন ঝঢ়ধপব ঞবষবংপড়ঢ়ব, এধরধ, এবং ঐঁননষব, যেগুলো আমাদের গ্যালাক্সির গঠন, তারাভিত্তিক আন্দোলন, এবং অজানা বস্তু সনাক্ত করতে সহায়তা করছে। এই গ্যালাক্সি শুধু আমাদের ভৌগোলিক অস্তিত্বের কেন্দ্র নয়, বরং এটি আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক বড় গবেষণাক্ষেত্র। আকাশগঙ্গা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, এই বিশাল মহাবিশ্বে আমরা কতটুকু ক্ষুদ্র এবং একে ঘিরে আমাদের জানার আগ্রহ কতটা অপার। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আমাদের শিখিয়ে দেয়, মানুষ তার জ্ঞান, প্রযুক্তি ও কৌতূহল দিয়ে কিভাবে কোটি কোটি আলোকবর্ষ পেরিয়ে নিজের স্থান খুঁজে পেতে পারে। এটি কেবলমাত্র একটি গ্যালাক্সি নয়, বরং একটি মহাজাগতিক পরিবার, যেখানে আমরা পৃথিবীবাসীরা একটি ছোট্ট বিন্দু মাত্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিল্টুদের ওয়াশিংমেশিন
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ কর্মকর্তার তথ্যানুসন্ধানে দুদক