সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ও ছবি পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যার পর এমপি আনারকে বেঁধে রাখার চিত্র মিলেছে ছবি–ভিডিওতে। ভিডিওতে দেখা যায়, অজ্ঞান করার রাসায়নিক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে আনারকে বালিশ চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মৃত অবস্থায়ও আনারের হাত ও পা চেয়ারে বাঁধা ছিল। ডিবি সূত্র জানায়, কিলার শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ১৬ মে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর মোবাইলে কথাবার্তা ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ চালাচালি এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সাক্ষাৎ হয়। যার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। বাংলানিউজ জানায় : আনার হত্যারকাণ্ডের পর সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে শিমুল ভূঁইয়া শাহীনের মোবাইলে যেসব ছবি পাঠিয়েছিল সেগুলো শাহীনই প্রথম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর মোবাইলে পাঠিয়ে বলে ‘আনার শেষ, মনোনয়ন কনফার্ম‘। আর বাবুর সঙ্গে যেদিন ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে শিমুল ভূঁইয়ার দেখা হয় সেদিন শিমুল আনার হত্যার ছবিগুলো বাবুর কাছে পাঠায়। কারণ শাহীন আগে থেকেই শিমুলকে বলেছিল এসব ছবি দেখিয়ে যেন বাবুর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নেয়। তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভূঁইয়া, বাবু ও মিন্টুর সঙ্গে শাহীনের এবং তার সঙ্গে শুধু বাবুর যোগাযোগ হয়েছে বলে জানায়। শিমুলের দেওয়া এ তথ্য পাওয়ার পর থেকে যাচাই বাছাই শুরু করে ডিবি। তদন্তের একপর্যায়ে বাবুকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালায় ডিবি। বিষয়টি টের পেয়ে বাবু তার তিনটি মোবাইল ফোন নিজেই ধ্বংস করে হারানোর নাটক করে থানায় জিডি করে। কারণ তার মোবাইলে আনার হত্যার বিষয়ে শিমুল, শাহীনের সঙ্গে যেসব কথাবার্তা হয়েছে তার প্রমাণ ছিল।
বাবু বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন। আর মিন্টুকে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। বিডিনিউজ জানায় : ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, সদুত্তর দিতে না পারলে মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হবে। বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তের ধারাবাহিকতায় আমরা এর আগে ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসি। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি আমাদের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন যে আনার হত্যার মূল ঘাতক শিমুল ভুঁইয়ার তার সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গাড়িতে বসে মিটিং করেছে। সেখানে শিমুল তাকে আনারকে হত্যার পরের ছবি দেখিয়েছেন। পরে যখন আমরা বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলাম আপনি কাকে কাকে মৃত ব্যক্তির ছবি দেখিয়েছেন তখন তিনি আরেকজন আওয়ামী লীগ নেতার কথা বলেছেন। তার মোবাইলগুলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেছেন ’আরেক নেতার কাছে আছে তার মোবাইল’।”
হারুন বলেন, “যখন আমরা সবাই এমপি আনারকে খুঁজছি সেখানে মে মাসের ১৬–১৭ তারিখে ভাঙ্গাতে গাড়িতে বসে মিটিং করল। গাড়ির ভেতরে বসে টাকা–পয়সার কথা বলেছে তারা। বাবু এবং কিলার গাড়িতে বসে মিটিং করে একজন নেতাকে ফোন করেন। এখন বাবু বলছেন, আমি ওমুকের সাথে কথা বলেছি, আমার মোবাইলগুলো তাকে দিয়েছি। এই তথ্যগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের জন্যই মূলত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে ডেকেছেন।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঊর্ধ্বতন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “মিন্টু যদি তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন তাহলে তিনি এখান থেকে চলে যাবেন। আর যদি না পারেন তাহলে তদন্তের ধারাবাহিকতায় যা করার তা করা হবে।”
এদিকে বাবা হত্যার সঠিক বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আবেদন করেছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গতকাল বুধবার বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডরিন এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, প্রকৃত অপরাধীরা কেউ যেন কোনো সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে মন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন ডরিন। এ ব্যাপারে মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ডরিন সাংবাদিকদের বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার তদবির চলছে জানতে পেরে তার উদ্বেগের বিষয়টি মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন। বাবা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে মন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।