মিরাজ-নাহিদের বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ

সিলেট টেস্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ২২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সিলেট টেস্টের প্রথম দিনটা ছিল বাংলাদেশের জন্য একেবারেই হতাশার। তবে দ্বিতীয় দিনে সে হতাশা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে টাইগাররা। প্রথম দিনে ব্যাটারদের মতো বোলাররাও ছিল বিবর্ণ। তবে দ্বিতীয় দিনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগার বোলাররা। বিশেষ করে নাহিদ রানার গতি আর মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণির কাছে কাবু হয়েছে জিম্বাবুয়ে। দিনের শুরু থেকেই নাহিদ রানা এবং হাসান মাহমুদকে মোকাবেলা করতে নাভিশ্বাস উঠছিল জিম্বাবুয়ে ব্যাটারদের। আর দিনের মাঝপথে মিরাজ স্বরূপে আবির্ভূত হলে বেশিদূর এগোতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

আগের দিন জিম্বাবুয়ের পেসাররা ভালো করলেও বাংলাদেশের পেসাররা পারেননি। তবে দ্বিতীয় দিনে বেশ ভালভাবেই নিজেদের ফিরে পেয়েছেন তারা। সে সাথে মেহেদী মিরাজের স্পিন বাংলাদেশকে ফিরিয়েছে ম্যাচে। অথচ প্রথম দিনের শেষভাগে দারুণ ব্যাটিং করেছিল জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার। বাংলাদেশের বোলারদের বোলিং ছন্দে জিম্বাবুয়ের ইনিংস থামে ২৭৩ রানে। তাতে সফরকারীরা লিড পায় ৮২ রানের। দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ ওভারে ১ উইকেটে ৫৭ রান করে দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর দল এখনো ২৫ রানে পিছিয়ে। মাহমুদুল হাসান জয় ২৮ ও মুমিনুল হক অপরাজিত আছেন ১৫ রানে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের দিনের বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে জিম্বাবুয়ে। সকাল সকাল বাংলাদেশকে আশা দেখান নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদরা। দিনের শুরুতেই তৃতীয় ওভারে নাহিদ রানার বাউন্সে পরাস্ত হয়ে শর্ট লেগে মুমিনুল হকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বেন কারেন ফিরেন ১৮ রান করে। এর তিন ওভার পর নাহিদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন হাফ সেঞ্চুরিয়ান ব্রায়ান বেনেট। নাহিদের করা গুড লেহ্নের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক জাকের আলীর গ্লাভসে ধরা পড়েন বেনেট। ৬৪ বলে ১০ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫৭ রান। পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের চোখ ধাঁধানো এক ডেলিভারি। অফ স্টাম্প উড়ে যায় নিক ওয়েলচের। ৮৮ রানে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে শন উইলিয়ামস আর ক্রেইগ এরভিন অনেকটা সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। চতুর্থ উইকেটে ৪১ রানের জুটি করেন উইলিয়ামস ও এরভিন। এই জুটিও ভাঙেন নাহিদ রানা। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এরভিনকে উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিকের ক্যাচ বানান তিনি। ৩৯ বলে মাত্র ৮ রান করে সাজঘরে ফিরেন এরভিন। পঞ্চম উইকেটে আবারও প্রতিরোধের চেষ্টা উইলিয়ামসের। এবার তার সঙ্গী ওয়েসলি ম্যাধেভেরে। এই জুটিতে আসে ৪৮ রান। ম্যাধেভেরেকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন পেসার খালেদ আহমেদ।

এরপর শুরু মেহেদী হাসান মিরাজের ভেল্কি। আঠার মতো উইকেটে লেগে থাকা উইলিয়ামসকে আউট করে হিসেবের খাতা খুলেন মিরাজ। ডানহাতি টাইগার স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ হন তিনি। আউট হওয়ার আগে বাঁহাতি ব্যাটার অবশ্য নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ১০৮ বলে ৫৯ রান করেছেন উইলিয়ামস। মেরেছেন ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। এরপর জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন নায়াশা মায়াভো। তাকেও থামান মিরাজ। ৫৪ বলে ৩৫ রান করে মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হন মায়াভো। ৫ রান পর রিভিউ নিয়ে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে ফেরান মিরাজ।

এরপর ব্লেসিং মুজারাবানি এবং রিচার্ড এনগারাভা বাধা হওয়ার চেষ্টা করেন। দ্রুত ৩৬ রান যোগ করেন দুজন। এ জুটি ভাঙারও দায়িত্ব নেন মিরাজ। ১৬ বলে ১৭ রান করা মুজারাবানিকে স্টাম্পড করে ফেরান মিরাজ। তুলে নেন নিজের চতুর্থ উইকেট। সারাদিন উইকেটহীন থাকা দলের সেরা স্পিনার তাইজুল পেতে পারতেন একটি উইকেট। কিন্তু ভিক্টর নিয়াউচির ক্যাচ স্লিপে সাদমান ছেড়ে দিলে সেটা লেখা হয়ে যায় মিরাজের ভাগ্যে। পরের ওভারেই সেই নিয়াউচিকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে ২৭৩ রানে থামানোর সাথে নিজের ১১তম ৫ উইকেট তুলে নেন মিরাজ। ৪৪ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন রিচার্ড এনগারাভা। ৫২ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নাহিদ রানা ৩টি উইকেট নিয়েছেন ৭৪ রানে। একটি করে উইকেট নিয়েছেন খালেদ আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।

প্রথম ইনিংসে ৮২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন মাহমুদুল হাসান জয় এবং সাদমান ইসলাম। কিন্তু চতুর্থ ওভারেই সেই মুজারাবানির আঘাত। দলীয় ১৩ রানের মাথায় উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সাদমান। ১০ বলে ৪ রান করে ব্লেসিং মুজারাবানির বলে সেকেন্ড স্লিপে শন উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। প্রথম ইনিংসে সাদমান ইসলাম আউট হয়েছিলেন ১২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ এই বাঁহাতি ব্যাটার। এই ইনিংসে করেছেন মাত্র ৪ রান। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের অস্বস্তির কারণ হয়েছেন তিনি।

এরপর মাহমুদুল হাসান জয় ও মুমিনুল হক কিছুটা দেখেশুনে খেলায় দ্বিতীয় দিনের শেষটা খুব বেশি খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। তবে এরই মধ্যে দুবার জীবন পেয়েছেন জয়। একবার ৬ রানে আবার ১৮ রানে জীবন পান জয়। প্রথমবার বোলার মুজারাবানী আর দ্বিতীয়বার এনগারাভা। ২৫ রানে পিছিয়ে থেকে আজ তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন জয় ও মোমিনুল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামকে ক্লিন সিটিতে রূপান্তরে ব্যবসায়ীদের পাশে চাইলেন মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে কালবৈশাখী, ঘরবাড়ি ও বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যাপক ক্ষতি