চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে মনে হয়েছিল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে ব্যাটিং করাটা বোধহয় রাজ্যের সবচাইতে কঠিন কাজ। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে এটা উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কথা বলতে থাকে। অন্তত ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে সেটা বলাই যায়। হয়তো আফসোস করছেন তামিম-মুশফিকরা। কারন বাংলাদেশ দলের শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা বিশেষ করে মেহেদী হাসান মিরাজ যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতে আফসোস থাকারই কথা দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। প্রথম দিন ব্যাট করা কঠিন মনে হওয়া উইকেটে দ্বিতীয় দিনে রানের বন্যা বইয়ে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশ দলকে উদ্ভাসিত করলেন এই অল রাউন্ডার। টেস্ট ক্রিকেটতো বটেই ক্যারিয়োরে কোন ফরমেটের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি নেই মিরাজের। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মিরাজ। আর তাতে বাংলাদেশ চড়ে বসে রানের পাহাড়ে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৪৩০ রান। যেখানে মিরাজের পাশাপাশি অবদান ছিল দলের সব ব্যাটসম্যানের। তবে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরাও দারুন অবদান রেখেছেন দলের এই সংগ্রহে। মিরাজের সেঞ্চুরি ছাড়াও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দুই ব্যাটসম্যান। তবে সবচাইতে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে পাঁচটি পঞ্চার্ধো রানের জুটি গড়েছে ব্যাটসম্যানরা। যেভাবে প্রথম দিনের কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দ্বিতীয় দিনে রানের পাহাড়ে চড়ে টাইগাররা। দিনের পুরো দুই সেশন ব্যাটসম্যানরা শাসন করার পর শেষ সেশনে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুন ধাক্কা দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। তার ধাক্কায় ক্যারিবীয়রা ৭৫ রান তুলতে হারিয়েছে ২ উইকেট। এখনো ৩৫৫ রানে পিছিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅন এড়াতে তুলতে হবে ১৫৫ রান।
আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে সকালটা শুরু করেছিলেন লিটন এবং সাকিব। বেশ স্বাচ্ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন। কিন্তু সে ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেননা লিটন। অযথা কাট করতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। ওয়ারিক্যানের বল জায়গায় দাড়িয়ে কাট করার চেষ্টা করতে গিয়ে বোল্ড হলেন লিটন বোল্ড। ৫৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি ভাঙ্গে ৩৮ রান করা লিটনের বিদায়ে। এরপর সাকিবের সাথে যোগ দিয়ে রানের গতি আরো বাড়ান মিরাজ। ৬৭ রানের জুটি গড়েন দুজনে। এরই মধ্যেই নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব ১১০ বলে। দুজনের জুটিটাও হয়ে যায় ইনিংসের সর্বোচ্চ। আগের ব্যাটসম্যানদের অনেকের মত এবার সাকিবও নিজের উইকেট উপহার দেওয়ার মিছিলে যোগ দিলেন। কর্নওয়ালের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বেরিয়ে বলে অযথা শট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিলেন সাকিব। ভেঙ্গে গেল সেঞ্চুরির স্বপ্ন। ১৫০ বলে ৬৮ রান করে ফিরলেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ বার হাফ সেঞ্চুরি কররেও সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না একবারও। এরপর চলতে থাকে মিরাজ শো। তবে ধন্যবাদ দিতে হবে তাইজুল আর নাঈমকে। এদুজন দারুন সঙ্গ দিয়েছেন মিরাজকে। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৪৪ আর নাঈমের সাথে নবম উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে মিরাজ পৌঁছে যায় স্বপ্নের চূড়ায়। যদিও একেবারে শেষ মুহুর্তে মনে হচ্ছিল মিরাজের স্বপ্ন বোধহয় অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। কারন মিরাজের রান যখন ৯২ তখন ফিরেন নাঈম। অপর প্রান্তে মোস্তাফিজ। ভয় পেয়ে বসেছিল দুজনকেই। যদিও স্ট্রাইকে ছিলেন মিরাজ। তবে নিজের সুযোগকে হাতছাড়া করেননি মিরাজ। দারুন একটি ডাবল নিয়ে নিজেকে নিয়ে যান তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে। শেষ পর্যন্ত কর্নওয়েলকে ছক্কা মারতে গিয়ে মিরাজ আউট হলেও ১৬৮ বলে ১৩টি চারের সাহায্যে ১০৩ রান করে ফিরেন। ২২৭ মিনিট উইকেটে ছিলেন মিরাজ। দারুণ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন মিরাজ। আট নম্বরে পজিশনে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। ২০০৪ সালে এই পজিশনে শতরান করেছিলেন খালেদ মাসুদ, ২০১০ সালে মাহমুদউল্লাহ আর ২০১৩ সালে করেছিলেন সোহাগ গাজী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সফল বোলার ৪ উইকেট নেওয়া ওয়ারিকান।
দিনের শেষ সেশনটা বাকি তখনো। ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতেই মোস্তাফিজের আঘাত। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই মোস্তাফিজ ফেরান জন ক্যাম্পবেলকে। পরের বলেই আবার উইবেকট পেলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু রিভিউর কারণে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেণ শাইনি মুসলে। যদিও সেই মুসলেকে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি মোস্তাফিজ। নিজের ষষ্ট ওভারে ঠিকই মুসলেকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান মোস্তাফিজ। স্পিন দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা করা বাংলাদেশের স্পিনাররা দিনের বাকি সময়ে তেমন ভীতি সঞ্চার করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের দুই ব্যাটসম্যানের উপর। অধিনায়ক ব্রেথওয়েট বলতে গেলে হেজসে খেলেই মোকাবেলা করেছেন সাকিব, তাইজুল, মিরাজ, নাঈমদের। ফলে বনারকে নিয়ে দিন শেষ করে আসেন অধিনায়ক। ৪৯ রানে অপরাজিত আছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। আর বনার আজ ব্যাট করতে নামবেন ১৭ রান নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন হওয়া দুটি উইকেটই নিয়েছেন মোস্তাফিজ।