মিরাজের দিন, সেঞ্চুরির পর পাঁচ উইকেট

তিনদিনেই ম্যাচ জিতে গেল বাংলাদেশ, সিরিজ ড্র

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

সিলেটে অপ্রত্যাশিত হারে কেবল সমালোচনায় যে বিদ্ধ হচ্ছিল বাংলাদেশ তা কিন্তু না। নিজেদের যোগ্যতা নিয়েও কথা বলা শুরু করছিল অনেকেই। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হতে যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছিল টাইগার ক্রিকেটাররা। তাই চট্টগ্রামে জয়টা অত্যাবশ্যকীয় ছিল বাংলাদেশের জন্য। মান বাঁচানোর সে টেস্টে একেবারে হিংস্র বাঘের মতই ঝাঁপিয়ে পড়ল জিম্বাবুয়ের ওপর। যে আক্রমণে একেবারে দিশেহারা জিম্বাবুয়ে। সেই সাথে সিলেটে জিম্বাবুয়ের জয়টা কেবলই দুর্ঘটনা ছিল তা প্রমাণ করল বাংলাদেশ চট্টগ্রাম টেস্টে সফরকারীদের এক ইনিংস এবং ১০৬ রানে পরাজিত করে। বলা যায় একজন মেহেদী হাসান মিরাজের আগুনে যেন পুড়ে ছাই হয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। অবধারিতভাবে চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক তাই মিরাজই। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরির পর বল হাতে নিলেন ৫ উইকেট। আর তাতেই তিন দিনেই কুপোকাত জিম্বাবুয়ে।

চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটেবলে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করল বাংলাদেশ। সাদমান এবং মিরাজের সেঞ্চুরির পর তাইজুল এবং মিরাজের ৫ উইকেট নেওয়া। চট্টগ্রাম টেস্ট যেন ছবির মতই কাটল বাংলাদেশের জন্য। দুর্দান্ত এই জয়ে দুই টেস্টের সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। তারপরও সিলেটের হারটা যেন ক্ষত হয়েই থাকল স্বাগতিকদের জন্য। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন থেকেই আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের। তাইজুলের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে অল আউট হয়েছিল ২২৭ রানে। জবাব দিতে নামা বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে গড়ে ৪৪৪ রানের পাহাড়। যেখানে পুরো কৃতিত্ব সাদমান এবং মিরাজের। আর দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে এবার মিরাজের ভেল্কি। আর তাতেই বিশাল জয় বাংলাদেশের।

বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে আগের দিনের ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ দিনের শুরুতেই বৃষ্টির কবলে পড়ে। দিনের খেলা ১৬ বল হতেই নামে বৃষ্টি। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৮ মিনিট পর আবার খেলা শুরু হয়। এরপর বেশ ভালই এগুতে থাকে মিরাজ এবং তাইজুল। ৬৩ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ২০ রান করা মাসেকেসাকে তাইজুল ফেরান তার চতুর্থ শিকার বানিয়ে। এরপর শুরু হয় তানজিম সাকিবকে নিয়ে মিরাজের পথ চলা। এ জুটি ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। মধ্যাহ্ন বিরতি পেরিয়ে এগুতে থাকেন দুজন। যেখানে মিরাজ ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে আর সাকিব হাফ সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু মিরাজের স্বপ্ন পূরণ হলেও সাকিবকে ফিরতে হয়েছে হাফ সেঞ্চুরির আগেই। নবম উইকেটে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফিরেন তানজিম সাকিব। ৮০ বলে ৪১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। এরপর নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিতে বেশি সময় নেননি মিরাজ। ১৪৩ বলে ১১টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রামেই পেলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা। ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এই মাঠেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। যা এখানো পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার সেরা। যদিও সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর আর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মিরাজ। ফিরেছেন মাসেকেসির পঞ্চম শিকার হয়ে। স্টাম্পড হয়ে ফিরেন মিরাজ। তার আগে ১৬২ বলে ১০৪ রান করেন মিরাজ। আর তাতে বাংলাদেশের ইনিংস গিয়ে পৌঁছে ৪৪৪ রানে। আর ততক্ষণে বাংলাদেশের লিড গিয়ে দাঁড়ায় ২১৭ রানে। জিম্বাবুয়ের অভিষিক্ত লেগ স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসা ১১৫ রানে নেন ৫ উইকেট।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়েকে শুরু থেকেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। ইনিংসের সপ্তম এবং নিজের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই ওপেনার ব্রায়ান ব্যানেটকে ফেরান তাইজুল। শর্টে দারুন এক ক্যাচ নেন সাদমান। একবল পর নিক ওয়েলচকেও ফেরান তাইজুল। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। যদিও আম্পায়ার আউট দেননি। তবে রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেন তাইজুল। ২ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। বিরতি থেকে ফিরেই দ্বিতীয় ওভারে আবার ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। নিজের প্রথম ওভারেই নাঈম ইসলাম তুলে নেন ম্যাচে তার তৃতীয় উইকেট। নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে নাঈম ফেরান শিন উইলিয়ামসকে। ২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় তখন জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন বেন কারান এবং ক্রেইগ এরভিন। কিন্তু তাদের প্রতিরোধকে বেশিদূর যেতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের ৪৭ রানের জুটি ভাঙ্গেন মিরাজ এরভিনকে ফিরিয়ে। ৫৬ বলে ২৫ রান করা এরভিন ফিরেন বোল্ড হয়ে। ওভারের শেষ বলে ওয়েসলি মাধবেরিকে ফেরান মিরাজ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মাধবেরি। নিজের পরের ওভারে আবার মিরাজের আঘাত। এবার তার শিকার তিসিগা। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দারুন ক্যাচ নেন এনামুল। টানা বল করে চলা মিরাজ নিজের চার নাম্বার শিকারটা ধরেন মাসাকাদজাকে আউট করে। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রাখা বেন কারেন লড়াই করে যাচ্ছিলেন। শেষ বাধা হয়ে থাকা এই ওপেনারকেও উপড়ে ফেলেন মিরাজ। উইকেটের পেছনে জাকের আলির ক্যাচে পরিণত করে বেন কারেনকে ফিরিয়ে সিরিজে তৃতীয়বারের মত ৫ উইকেট তুলে নেন মিরাজ। ৪৬ রান করে ফিরেন বেন কারেন। এরপর দ্রুত মাসেকেসা এবং এনগ্রাবাকে ফিরিয়ে তিন দিনেই টেস্ট জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ দল। মিরাজ নিলেন ৩২ রানে ৫ উইকেট। একই টেস্টে সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট নিয়ে নিজেকে গ্রেটদের কাতারে নিয়ে গেলেন মিরাজ। আর সে সাথে জিতলেন ম্যাচ এবং সিরিজ সেরার পুরস্কার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচান্দগাঁও থানা মোড়ে বিক্ষোভ এলাকাবাসীর
পরবর্তী নিবন্ধজ্বালানি তেলের দাম লিটারে কমল ১ টাকা