মিরাজের অল আউন্ড নৈপুণ্যে দুর্দান্ত জয় বরিশালের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বরিশাল দলে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। দেশী বিদেশী অনেক সেরা ব্যাটসম্যান রয়েছে দলটিতে। তারপরও এবারের বিপিএলে প্রথম জয়টা পেয়েছে বরিশাল সেই মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে। তার অল রাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। অবশ্য বরিশালের বোলাররা নাগালের মধ্যেই রেখেছিল রংপুর রাইডার্সকে। আর বাকি কাজটা দারুণভাবে করেছে ব্যাটসম্যানরা। যদিও ম্যাচটিতে উত্তেজনার যেন কমতি ছিলনা। মাঠের ভেতরে এবং বাইরে ছিল দারুণ উত্তেজনা। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে বরিশাল তুলে নিল দারুণ এক জয়। গত ৭ জানুয়ারী নিজেদের প্রথম ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের কাছে হেরেছিল সাকিবের দল। অপরদিকে রংপুর রাইডার্স নিজেদের প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে বিপিএল শুরু করেছিল রংপুর। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে এসে হেরে গেল বরিশালের কাছে। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শোয়েব মালিকের হাফ সেঞ্চুরিতে রংপুর নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫৮ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে বরিশাল ম্যাচ জিতে যায় চার বল হাতে রেখে।

ম্যাচের প্রথম ভাগের নায়ক ছিলেন শোয়েব মালিক। আগামী মাসেই তার বয়স পূর্ণ হবে ৪১। পেশাদার ক্রিকেট খেলছেন সেই ১৯৯৭ সাল থেকে। এখনও যে তিনি দারুণ কার্যকর তা প্রমাণ করেন আরেকবার। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা রংপুর প্রথম বলেই হারায় মোহাম্মদ নাঈমকে। মেহেদী হাসানকে নিয়ে ২৩ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি রনি তালুকদার। মেহেদী ফিরেছেন ৬ রান করে। দ্রুত ফিরেন সিকান্দার রাজাও। ২ রান করেন তিনি। এরপর শুরু থেকেই ঝড় তোলা রনি তালুকদার পারেননি শোয়েব মালিককে বেশিক্ষন সংঘ দিতে। আগের ম্যাচে ৩১ বলে ৬৭ রান করা রনি তালুকদার এই ম্যাচে ২৮ বলে ৫টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রান করে ফিরেন । এরপর বলতে গেলে শোয়েব মালিক একাই দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। নুরুল হাসানের ১২ বলে ১২ এবং রবিউল হকের ১৫ বলে ১৮ রান কিছুটা সহায়তা করেছে রংপুর রাইডার্সের স্কোর দেড়শ পার করতে। বরিশালের বোলাররা আউট করতে পারেনি শোয়েব মালিককে। অভিজ্ঞ এবং ব্যাটসম্যান তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি। ৫টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৩৬ বলে ৫৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক। আর তাতে রংপুর রাইডার্সের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ১৫৮ রানে। বরিশালের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন চতুরঙ্গ ডি সিলভা এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৫৯ রানের ইনিংসটাকে বেশ চ্যালেঞ্জিংই মনে হচ্ছিল। তবে ষে পর্যন্ত উত্তেজনার রেশ থাকল কেবল ক্রিকেটের বাইরে। ব্যাটবলে লড়াই খুব একটা হলো না। বরিশালের রান তাড়ার শুরুতেই বাধে বিপত্তি। প্রথম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানকে বল হাতে দেখে স্ট্রাইকে যান বরিশালের বাঁহাতি ওপেনার চতুরাঙ্গা ডি সিলভা। রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান তখন রকিবুলকে সরিয়ে বোলিংয়ে আনেন অফ স্পিনার মেহেদি হাসানকে। এটি দেখে সাকিব ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে ইশারায় স্ট্রাইকে যেতে বলেন ডানহাতি ওপেনার এনামুল হককে। এসব নিয়েই এক পর্যায়ে সাকিব ঢুকে যান মাঠে। আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায় তাকে। একটু পর মাঠ ছেড়ে যান তিনি। এত কান্ডের পর স্ট্রাইক পেয়ে অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি চতুরাঙ্গা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ক্যোচ দেন। সেটি হাতে নিয়েও রাখতে পারেননি রকিবুল। তবে চতুর্থ বলেই লঙ্কান এই ক্রিকেটার ধরা পড়েন মিড অফে। আরেক পাশে এনামুল শট ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। মেহেদিকে চার মারার পাশাপাশি ছক্কা মারেন রকিবুলকে। তবে চতুর্থ ওভারে আবার বিতর্ক। এবার সিকান্দার রাজার বলে এনামুলকে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ না দিলে রিভিউ নেয় রংপুর। কয়েক দফা রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন এনামুলকে। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দিতে হলে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে টিভি আম্পায়ারকে। কিন্তু এখানে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল না কোনোভাবেই। এই সিদ্ধান্তে ব্যাটসম্যান এনামুলকে দেখা যায় ক্ষিপ্ত হয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে। এনামুল হক ফিরেন ১১ বলে ১৫ রান করে। এরপর জুটি গড়েন মিরাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান। দুজন বেশ ভালভাবেই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৫৮ বলে ৮৪ রানের জুটি গড়ে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন দুজন। রবিউল হকের বলে স্লগ করতে গিয়ে মিরাজের বিদায়ে ভাঙ্গে এই জুটি। ২৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪৩ রান করে ফিরেন মিরাজ। এরপর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইব্রাহিম জাদরান। সাকিব ব্যাটিংয়ে না নেমে ইফতেখারকে পাঠান ইব্রাহিমের সাথে সঙ্গ দিতে। কিন্তু দুজন বেশিক্ষন একসাথে থাকতে পারেনি। দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিষেকে আফগান এই ব্যাটসম্যানের রান ৪১ বলে ৫২। ৫টি চারের পাশাপাশি ২টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ইব্রাহিম আউট হওয়ার পরও মাঠে নামেননি সাকিব। পাঠিয়েছেন আরেক আফগান করিম জানাতকে। এরপর ইফতিখার আহমেদ ও করিম জানাত মিলে বাকি পথ পাড়ি দেন সহজেই।

ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করা ইফতিখার অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ২৫ রান করে। আর করিম জানাত মাঠ ছাড়েন ১৪ বলে অপরাজিত ২১ রান নিয়ে। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বরিশালের মেহেদী হাসান মিরাজ। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন বিসিবির পরিচালক আকরাম খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকাকে হারিয়ে সিলেটের চারে চার
পরবর্তী নিবন্ধআল রাওয়া ইংলিশ স্কুলে বই বিতরণ