গাজীপুরের কালীগঞ্জের এক যুবককে ইতালিতে চাকরির কথা বলে মিয়ানমারে নিয়ে বন্দি–নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় এক রোহিঙ্গাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে কঙবাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন– কঙবাজারের পূর্ব কলাতলির মীর কাশেমের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৫৪), বোরহান (২১), টেকনাফের তৈয়ব (২১) এবং উখিয়ায় বসবাস করা রোহিঙ্গা মো. উল্লাহ (৩৮)। আর মিয়ানমারে বন্দি আরিফ হোসেন (৪৫) কালীগঞ্জের চুয়ারিয়াখোলা এলাকার জয়নাল আবেদিনের ছেলে। মালয়েশিয়া প্রবাসী আরিফ ২০২৩ সালে দেশে ফিরে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানান, মালয়েশিয়া থাকা অবস্থায় আরিফের সঙ্গে কক্সবাজারের রামুর পশ্চিম সিকদার পাড়ার কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) এবং মোস্তাক আহমেদসহ কয়েকজনের পরিচয় হয়। ২০২৩ সালে আরিফ দেশে ফিরলে তাকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে মামুন ও মোস্তাক। এ নিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছয় লাখ টাকায় চুক্তি হলে কয়েকধাপে নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন আরিফ।
এরপর আরিফকে প্রথমে মিয়ানমারে নিয়ে পরে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ১১ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে নিয়ে যায় তারা। কিন্তু মিয়ানমারে নেওয়ার পর তারা আরিফকে বন্দি করে নির্যাতন করতে থাকে। এরপর নির্যাতন চালিয়ে কয়েক ধাপে তার পরিবার থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে মানবপাচার চক্রের সদস্যরা। কিন্তু এরপরও আরিফকে দেশে ফিরতে দেয়নি ওই চক্র। বরং সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
একপর্যায়ে ১৮ জানুয়ারি আরিফের স্ত্রী সুলতানা বেগম প্রথমে কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন–২০১২’–এ কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এ ঘটনায় জড়িতরা আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামি মোস্তাক কঙবাজারে অবস্থান করার খবরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের আরও তিন সদস্যকে কঙবাজার ও টেকনাফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানিয়েছে, আরিফ বর্তমানে মিয়ানমারে আছে। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’