মিয়ানমারের গোলায় ২ বাংলাদেশির মৃত্যু

পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বেড়ে ১০৬ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার, গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নারীসহ ২ জন নিহত হয়েছে। নিহত নারীর নাম আসমা খাতুন (৫৫)। তিনি ওই গ্রামের বাদশা মিয়া সওদাগরের স্ত্রী। নিহত অপরজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে সে রোহিঙ্গা শ্রমিক বলে জানা যায়। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম, তুমব্রু, কোনাপাড়া, জলপাইতলী গ্রামের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মীর (এএ) মধ্যে তুমুল সংঘাত চলছে। বিদ্রোহীদের রুখতে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর কয়েকটি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলের আশপাশে একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করছে। বোমা নিক্ষেপের পর দেশটির সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর একটি ক্যাম্পে আগুন জ্বলতে দেখেছেন এপারের বাসিন্দারা। গত শনিবার থেকে টানা সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীরা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তুমব্রু, ঘুমধুম, বালুখালী তিনটি ক্যাম্প দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে তুমব্রু, ঘুমধুম ক্যাম্পের অনেকখানি অংশ দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এদিকে বিডিনিউজ জানায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম গতকাল সকালে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। রোববার মধ্যরাতে বিজিবির পক্ষ থেকে মোট ৬৮ জন বিজিপি সদস্যের অনুপ্রবেশের কথা জানানো হয়েছিল। সোমবার সকালে সেই সংখ্যা ৯৫ জনে পৌঁছেছে। বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে অন্তত ২২ জন এসেছেন আহত অবস্থায়। তাদের মধ্যে সাতজনকে কঙবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমারের ওপার থেকে ছোড়া মর্টা শেলের বিস্ফোরিত অংশ জলপাইতলী এলাকায় এসে পড়ে। এ সময় মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক বাংলাদেশি নারীর। নিহতের নাম আসমা খাতুন। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় একজন পুরুষ শ্রমিককে উদ্ধার করে কঙবাজারের এমএসএফ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সীমান্তবাসীরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।

তুমব্রু বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, দুপুরের দিকে আমার চোখের সামনেই কয়েকটি গুলি এসে পড়েছিল বাড়ির আঙ্গিনায়। নিরাপত্তাহীনতায় পরিবারকে কঙবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। নিজেও ইটের দেয়ালের একপ্রান্তে ভয়ে বসে আছি। সীমান্ত পরিস্থিতি কয়েকদিনের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান জানান, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে যানবাহন ও লোকজনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজও বন্ধ রাখা হয়েছে। সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সতর্কবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বিজিবি। মর্টার শেলের আঘাতে নিহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণভবনে আ. লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের আমন্ত্রণ
পরবর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিনে নারী পর্যটক নিখোঁজ