মিতু হত্যার মোটিভ জানতে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পিবিআই

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ১৪ মে, ২০২১ at ৯:৫৬ অপরাহ্ণ

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করার কী কারণ থাকতে পারে? শুধুই কি স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পরকীয়ার বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছে? নাকি আরো কিছু আছে? যদি বাবুল আক্তারই মূল পরিকল্পনাকারী হয়ে থাকে, তবে নিজেকে রক্ষায় তাঁর পূর্ব পরিকল্পিত কৌশলগুলোইবা কী ছিল? ঘটনায় গায়ত্রীর সম্পৃক্ততা কতটুকু? -এ তিনটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পেলে পিবিআই তদন্ত টিম সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করছে।

আজ বাবুল আক্তারকে দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আদালত গত বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে সেদিনই তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। যদিও প্রথমদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, তারা নিজেরাই এ তিনটি প্রশ্নের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত। হতে পারে রিমান্ডের বাকি দুই দিনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর কিছু বের হতে চলেছে, অথবা এমনও হতে পারে, শুধুমাত্র পরকীয়ার বলীই হয়েছেন মিতু; যেটি তার বাবা মোশাররফ হোসেন বারে বারে অভিযোগ করে আসছেন।

তদন্তকারী টিমের এক সদস্য আজাদীকে জানান, চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাবস্থায় নিজ কর্মগুণে বাবুল আক্তার মিডিয়ার আস্থা অর্জন করেছিলেন। পাশাপাশি মিতু হত্যার আগে জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচিত ছিলেন বাবুল আক্তার। এ দুটো কারণে তার মধ্যে একটা ওভার কনফিডেন্স সৃষ্টি হয়েছিল যে, জঙ্গি নাটক মিডিয়াকে বিশ্বাস করাতে তার বেগ পেতে হবে না। খুনের পরপর গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যম ব্যতীত প্রায় সকল মিডিয়া তা-ই লিখেছিল।

দ্বিতীয় একটা পরিকল্পনা থাকতে পারে, যেহেতু জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ঘটনা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত , কাজেই মামলাটির বাদী হলেও তদন্তভার একটা পর্যায়ে তার উপরই অর্পিত হবে। তখন তিনি ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন।

তৃতীয় কারণ হতে পারে, তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের যে কথাগুলো এখন উঠে আসছে, সেই সময় যেকোন কারণেই হোক, এ বিষয়টি ঘর বন্দি ছিল। পিবিআই কর্মকর্তারা এটাও খতিয়ে দেখছেন যে, যদি পরকয়িা থাকে এবং এ বিষয়ে দাম্পত্য করহ হয়ে থাকে তবেতো সহজেই ডিভোর্স দেয়া যেত মিতুকে, খুন করার প্রয়োজন হবে কেন? এক্ষেত্রেও আবার সামনে চলে আসছে মিডিয়ার সাথে তার ঘনিষ্টতা। যে ঘনিষ্টতার কারণে বাবুল জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করতে চেয়েছিলেন, ঠিক একই কারণে যদি বিবাহ বিচ্ছেদ হতো, সেটাও চাপা থাকতো না। কারণ হিসেবে পরকীয়ার প্রসঙ্গটি উঠে আসতে পারতো।

আবার এমনও হতে পারে, মিতু নিজেই মিডিয়ার শরণাপন্ন হতে চেয়েছিলেন। পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, এ সবই অনুমান। সত্য জানতে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা নিদিৃষ্ট বিন্দুতে আসতে পারি নি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের সন্দেহগুলো যাচাই বাছাই করছি।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরপর মামলার তদন্তে গতি আসে। ১৫ মাস পর গত ১১ মে বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই। তবে এর আগেই ঘটনার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। পরদিন আদালতে চ’ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বাবুল আক্তারের মামলার। এরপর মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে নতুনভাবে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, বাবুল আক্তারের মোবাইলে পাঠানো গায়ত্রীর ২৯টি মেসেজ খুনের শিকার হওয়ার আগে মিতু তার ব্যবহৃত একটি খাতায় লিখে যান। এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া দু’টি বইয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের কিছু লিখিত তথ্য প্রমাণ আছে।

মোশাররফ হোসেনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (১২ মে) বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে পিবিআই। আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাবুল আক্তারকে পিবিআই হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, গায়ত্রীর ২৯টি মেসেজ লেখা মিতুর খাতা ও বাবুলকে উপহার হিসেবে দেওয়া দু’টি বই তারা আলামত হিসেবে জব্দ করেছেন। কিন্তু মেসেজগুলো গায়ত্রীর কি না এবং বইয়ে যেসব হাতের লেখা আছে সেগুলো বাবুল আক্তারের কি না, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বাবুল আক্তারকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া বিষয়টি নিশ্চিতে প্রযুক্তিরও ব্যবহার করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো নীরব-নিস্তব্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ‘আমাদের পেটে ভাত নেই, পরিবারে ঈদ নেই’