মিতুর টিয়ে পাখি

আজহার মাহমুদ | বুধবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই মিতুর মন খারাপ। বাবাকে বলেছিলো পাখির জন্য খাবার আনতে। মিতুর বাবা মিতুকে ভুলে গেছে এটা বললেও মিতু মানছে না। মিতু কোনো ভোর তাঁর প্রিয় পাখিকে না খাইয়ে শুরু করে না। তাই আজ মিতুর মন খারাপ। মিতুর মন খারাপের দিনে সবচেয়ে বেশি মন খারাপ করিম মিয়ার। করিম মিয়ার চায়ের দোকান পরশুদিন থেকে বন্ধ। একদিকে আদরের মেয়ে বাবার সাথে অভিমান করে আছে, অন্যদিকে লকডাউনের কারণে সংসারের খাবার, ঘরভাড়া, দোকান ভাড়া, কারেন্ট বিল নিয়ে খুব বেশি চিন্তায় আছেন তিনি। করিম এখন পাখির খাবারের চাইতে নিজেদের খাবার নিয়ে বেশি চিন্তায় আছে। তাঁর মেয়ে মিতু অবশ্য আরও বেশি চিন্তিত পাখির খাবার নিয়ে।
দুপুরে যখন করিম মিয়া এবং তার স্ত্রী খেতে বসেছেন, তখন মিতু নেই। মিতুর জেদ খুব বেশি। সে পাখিকে না খাইয়ে কিছুই খাবে না। এই পাখিটির সাথে মিতুর সম্পর্ক বেশিদিনেরও নয়। এইতো মাস তিনেক আগে এসেছে এই ঘরে। মিতু অল্পদিনেই পাখিটির সাথে মধুর সম্পর্ক করে ফেলেছে। মিতুর বন্ধু বলতে এই পাখিটাই। পুরোটা দিন কাটে পাখির সাথে। টিয়া পাখিটাও কম কোথায়! মিতুর কথার সাথে সাথে মিটু মিটু বলে চিল্লায়। করিম মিয়া এবং তার স্ত্রী এসব দেখে মাঝে মাঝে হাসেন। মিতুর মা কিন্তু মাঝে মাঝে বকাও দেন। পড়াশোনা করার সময় যদি পাখির সাথে গল্প করতে যায় তখন বকা শুনে মিতু। মিতু তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন মিতুর কাছে পাখির খাবার বড় বিষয়। তাই সে দুপুরে না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। তবে বিকেলে মায়ের আশ্বাসে খেয়েছে। কিন্তু আজও বাসায় আসার সময় মিতুর বাবা পাখির জন্য খাবার আনেনি। মিতুর বাবা মিতুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। চুপচাপ বসে আছে। কাল থেকে করিম মিয়ার দোকান লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকবে। করিম মিয়ার সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। করিম মিয়া ভাবছেন অন্য বিষয় নিয়ে। কিন্তু তার মেয়ে মিতু ভাবছে পাখির খাবার নিয়ে। এই ভাবনাতেই সবাই ঘুমিয়ে গেলো। বাবা-মেয়ের খেতে না চাওয়া দেখে রহিমা বিবি নিজেও খেলো না। স্বামী সন্তানের সাথে উপস থেকে ঘুমিয়ে গেলো। করিম মিয়া মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ চিন্তা করছে, পাখির খাবার এনে দিলে আর কয় টাকা খরচ হবে? কেন শুধু শুধু পাখিটা না খেয়ে থাকবে? আমাদের যেমন ক্ষুধা লাগে, পাখিরওতো লাগে। এসব চিন্তা করতে করতে ফজর হয়ে গেলো। নামাজ পড়েই সকাল সকাল এলাকার এক ছোট ভাইকে ফোন দিলো। তার পাখির খামার আছে। কবুতর, টিয়া, ময়না, শালিক সবই আছে। মিতুর টিয়া পাখিটাও তার কাছ থেকে নেওয়া। তাকে ফোন দিয়ে পাখির জন্য কিছু খাবার চাইলো করিম মিয়া। সে খাবারগুলো এনে সকালেই করিম মিয়া পাখির মুখে তুলে দিলো। পাখিটার খাওয়ার দৃশ্য দেখে করিম মিয়ার চোখে জল চলে এসেছে।
সকালে উঠে মিতু দেখছে তার প্রিয় পাখির খাচায় খাবার। মিতু একটু চমকে গিয়েছে। অদ্ভুত খুশিও হয়েছে। বাবার কাছে দৌড়ে গিয়ে বললো, বাবা তুমি খাবার কখন এনছো?
করিম মিয়া বলালো, আমি তো রাতেই এনেছি, তোমার সাথে দুষ্টমি করেছি আম্মাজান। মিতু তখন গালভর্তি হাসি দিলো আর বললো, রাতে দিলে তো আমার পাখি রাতেও খেতে পারতো। তুমি একটা বোকা।
করিম মিয়া বললো, আচ্ছা আম্মাজান আমি তোমার বোকা বাবা। এখন চলো আমরাও খাই। তারপর বাবা মেয়ে এবং মিতুর মা একসাথে সকালের নাস্তা করলো। নাস্তা করার সময় করিম মিয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে বলছে, সৃষ্টিকর্তা যেন সামনের কঠিন দিনগুলোও এভাবে পার করে দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন সাইয়্যিদ মইনুদ্দীন আল্‌-হাসানী
পরবর্তী নিবন্ধহাফেজ মিজানুর রহমান