ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘কান্না না থামায়’ ছয় মাস বয়সী এক শিশুকে তার মা শ্বাসরোধে হত্যা করেছে এবং বাবা লাশ খালে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুটির মা–বাবা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বড়িশল দক্ষিণ পাড়ায় গত সোমবার এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুসরাত ওই এলাকার কৃষিজীবী জিল্লুর রহমান ও স্বপ্না বেগম দম্পতির মেয়ে ছিল। গত মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা। খবর বিডিনিউজের।
ঘটনার বর্ণনায় ওসি আসলাম বলেন, জিল্লুর ও স্বপ্না দম্পতির চার সন্তান। এর মধ্যে দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। গত ৩০ জুন রাতে নুসরাতকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তারা। পরদিন সকালে স্বপ্না নুসরাত নিখোঁজ হয়েছে বলে চিৎকার শুরু করেন। এরপর ঘটনাটি থানায় জানানো হলে তদন্তে নামে পুলিশ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পাশের একটি খাল থেকে নুসরাতের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশ জিল্লুর ও স্বপ্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তারা নিজেরাই শিশুটিকে হত্যা করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। পরে এ ঘটনায় নুসরাতের চাচা মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
মামলার বরাতে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গত ৩০ জুন রাত ১টার দিকে নুসরাত কান্নাকাটি শুরু করলে তার মা স্বপ্না বিরক্ত হয়ে যান। কান্না থামাতে নিজের গায়ে জড়ানো ওড়না দিয়ে নুসরাতের নাক–মুখে চেপে ধরেন তিনি। এক পর্যায়ে নুসরাত সাড়া–শব্দ না করলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্বামী জিল্লুর রহমানকে ডেকে তুলে বিষয়টি জানায়। এরপর স্বামী–স্ত্রী মিলে গুম করার উদ্দেশ্যে নুসরাতের লাশ বাড়ির পাশের একটি খালে ফেলে রেখে আসার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক জিল্লুর গিয়ে মরদেহটি খালে ফেলে দেয়।
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কান্নাকাটি করার জন্যই মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে জিল্লুর–স্বপ্না দম্পতি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তবে এর বাইরেও কোনো কারণ আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এই দম্পতির সাড়ে আট বছর বয়সী আরেক মেয়ে তায়েবাকেও তার আড়াই বছর বয়সে বাড়ির পাশের ঠিক একই খালে গলায় দড়ি পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এটিও রহস্যজনক। এই দম্পতির মেয়ে সন্তানের প্রতি কোনো বিরক্তি ছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ওসি আসলাম হোসেন।