‘মাগো তোর হৃদয় জুড়ে এসেছিলাম/ মাগো তোর বুক ভাসিয়ে ফিরে গেলাম’!- কথাগুলোকে সত্যি করতেই যেন ওরা পৃথিবীতে এসেছিল। ‘ওরা ১১জন’! মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের নয়, ওরা কোনো মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন। মায়ের আঁচলে ফেরার ভাগ্য যাদের কপালে আর জোটেনি। কৈশোর ও তারুণ্যের মাঝামাঝি যে প্রাণ চঞ্চল সময়, তাকে উপভোগ করতেই ওরা ছুটে গিয়েছিল মায়ের কোল ছেড়ে প্রকৃতির কোলে। প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিভোর কিশোর মন যেন স্বপ্নের ডানা মেলে উড়তে চায়। ঝর্নার উচ্ছ্বলতা আস্বাদন করতে চায়। প্রকৃতির সকল রূপ-রস-গন্ধ গায়ে মেখে ফিরতে চায় মায়ের বুকে।
বলতে চায় মাকে সেই অজানা সৌন্দর্যের গল্পকথা। মা প্রতীক্ষায় আছেন সেসব গল্প শোনার। কথার ফুলঝুরি নিয়ে যখন ছেলে ফিরবে, তখন মা অবাক হয়ে শুনবেন আর হাসি মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তবে কিছুই হল না, এই গল্পের। ছেলেরা ঠিকই ফিরে এলো মায়ের কোলে, তবে সাদা কফিনে সমস্ত শরীর ঢেকে। চিৎকার করে ‘মা’ বলে জড়িয়ে ধরা হল না, তবে মায়ের গগনবিদারী চিৎকারে আজ আমরা সবাই স্তব্ধ, নির্বাক। চালকের ভুল বা গেট ম্যানের ভুল যাই হোক না কেন, তার মাশুল দিতে হল ১১ জন মায়ের ১১জন তরতাজা সন্তানকে। যাদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাসিমুখে ঘরে ফেরার কথা তাদের বলি হতে হল রেলের চাকায় পিষ্ট হয়ে। এ কেমন নিয়তি?
মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ঠিক মত ঘরে পৌঁছতে পারবে-এ নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারছে না আজ! আমাদের সমাজব্যবস্থার দুর্বলতা, আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত, অযোগ্য মানুষকে যোগ্য আসনে বসিয়ে দেয়া, সর্বোপরি সড়ক ও রেল ব্যবস্থার সকল দুর্নীতির শিকার আজ সাধারণ মানুষ! যে সন্তানের মাঝে বাবা মায়েরা স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যতের আশার আলো খুঁজে পায় সে সব মায়েদের জীবনে আজ অমানিশার ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। সন্তানহারা সে সব মায়েরা কেমন আছেন? তারা কি মন থেকে বেঁচে আছেন? কী করে আমরা তাদের হাহাকার ও দুঃখ ঘোচাতে পারবো? আসুন আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করি। যোগ্য লোকের দ্বারা পরিচালিত হলে অপেক্ষারত কোনো মাকে কফিনে ঢাকা সন্তানের মুখ দেখতে হবে না। আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না, এটা আমাদের বিশ্বাস।