এক দশক আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে পাঁচ বছরের শিশু খন্দকার সামিউল আজিম ওয়াফিকে হত্যার ঘটনায় তার মা আয়েশা হুমায়রা ওরফে এশা ও তার প্রেমিক শামসুজ্জামান বাক্কুর ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম রোববার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। দুই আসামি আয়েশা হুমায়রা এশা এবং শামসুজ্জামান বাক্কু জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন। আর মামলার বাদী সামিউলের বাবা কে আর আজম বিচার চলার মধ্যেই মারা গেছেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দুই আসামির প্রত্যেককে একটি ধারায় পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন বিচারক। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করে পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, গাজীপুরের পুলিশ সুপার এবং পাবনার পুলিশ সুপারকে তার কপি পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘এশা ও বাক্কু তিন বছর ধরে বিবাহ বহিভূর্ত পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। সামিউল ছিল এশার একমাত্র সন্তান। সে তার মায়ের ওই সম্পর্কের বিষয়ে জানত, সে কারণে এশা তার সন্তানের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বাক্কুকে প্রলুব্ধ করে। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় সামিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। মামলার ভিকটিম একজন নির্দোষ শিশু হওয়ার পরেও হত্যার হাত থেকে কোনো অনুকম্পা বা ক্ষমা পায়নি। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ।’
সামিউলের বাবা কে আর আজমের বন্ধু ও ব্যক্তিগত আইনজীবী ইসলাম উদ্দিন বিশ্বাস এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ফারুক উজ্জামান ভূঁইয়া এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে সামিউলের পরিবারের কেউ রায়ের সময় আদালতে ছিলেন না; ছিলেন না পলাতকদের আইনজীবীরাও।
নবোদয় হাউজিংয়ের গ্রিনউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে গ্রুপের ছাত্র ছিল সামিউল। মায়ের ‘পরকীয়া’র জেরে ২০১০ সালের ২৩ জুন রাতে আদাবরে নিজেদের বাসায় সে খুন হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, বাক্কু ও এশার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ দেখে ফেলায় সামিউলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয় আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে সামিউলদের বাসার পাশে। লাশ উদ্ধারের পর সামিউলের মা এশা এবং তার প্রেমিক বাক্কুকে আসামি করে আদাবর থানায় হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা করেন সামিউলের বাবা কে আর আজম। গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুই আসামিই আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন বলে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার ওসি কাজী শাহান হক এ মামলায় বাক্কু ও এশার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরের বছর ১ ফেব্রুয়ারি ওই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এর সাত দিনের মাথায় আদালতে বাদী আজমের জবানবন্দি ও জেরা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিকে ২০১৪ সালে মামলার বাদী কে আর আজম থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে বলা হয়, হাই কোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে বাক্কু তাকে হুমকি দিচ্ছেন, মামলা চালানো বন্ধ না করলে ‘ছেলের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে’। ওই বছরই আদালতে আবেদন করে স্ত্রীর জামিন করিয়েছিলেন আজম, পরে কিছুদিন স্ত্রীর সঙ্গে ঘরও করেছিলেন তিনি। কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত আজম মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই মারা যান। মৃত্যুর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ মামলার বিচার চলাকালে মোট ২২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।