দীর্ঘ চার বছর পর কুয়েত থেকে ফিরেছেন মা শাহেদা বেগম। উদ্দেশ্য এক মাত্র ছেলে সাজ্জাদকে কুয়েতে নিয়ে যাওয়া। তার জন্য তৈরি করছিলেন যাবতীয় কাগজপত্র। কিন্তু গত ২৯ জুলাই দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ চলে যায় না ফেরার দেশে। হাটহাজারী উপজেলার মধ্য মাদার্শা গ্রামের নজু মিয়া বাপের বাড়ির মৃত আবদুশ শুক্কুরের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় সাজ্জাদ। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে মারা যান শাহেদা বেগমের স্বামী আবদুশ শুক্কুর।
ছেলে মেয়েকে নিয়ে বিধবা শাহেদা বেগম চলে আসেন বাপের বাড়ি খন্দকিয়ায়। ছেলে সাজ্জাদই ছিল ভরসা। সাজ্জাদের মুখের দিকে চেয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন শাহেদা।
স্বামীর মৃত্যুর পর উপার্জনক্ষম আর কেউ না থাকায় সহায় সম্বলহীন পরিবারের হাল ধরতে ২০১৭ সালে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে শাহেদা পাড়ি জমান কুয়েতে। সাজ্জাদ ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করেন দক্ষিণ মাদার্শা শ্যামা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তার পর জিয়াউর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে কিছু দিন চাকরি করেন আগ্রাবাদ একটি গাড়ির পার্টসের দোকানে। করোনাকালে চাকরি হারালে আর কাজে যোগ দেওয়া হয়নি। স্বপ্ন ছিল মায়ের সাথে কুয়েত গিয়ে পারিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন।
ইতোমধ্যে চার বছর পর গত মার্চ মাসে শাহেদা দেশে আসেন বেড়াতে। এবার ২৫ আগস্ট ছুটি শেষে শাহেদা সাজ্জাদকে নিয়ে কুয়েতে ফেরার কথা ছিল।
গতকাল বিকেলে খন্দকিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে সাজ্জাদের মা শাহেদা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে আমার বিয়ে হয়। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আমার স্বামী মারা গেলে চলে আসি বাপের বাড়িতে। ২০১৭ সালে আমি কুয়েতে চলে যাই গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। আমার ছেলে এইচএসসি পাস করলেও এখন বেকার। তাকেও কুয়েতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতো নিষ্ঠুর নিয়তি অপেক্ষা করছিল সেটি ধারণাও ছিল না। দুর্ঘটনা সব স্বপ্নকেও ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, যাওয়ার সময় আমি টাকা পয়সা লাগবে কী না জানতে চেয়েছি। টাকা লাগবে না বলে জানিয়েছে। দুপুরে খবর আসে তারা অ্যাঙিডেন্ট করেছে।
তিনি আরো জানান, দুপুরে একটা বিয়ের দাওয়াতে ছিলেন, সাজ্জাদের নানী ফোন করে তাড়াতাড়ি ঘরে আসতে বলেন। ঘরে এসে দেখেন সবাই কান্নাকাটি করছে।
এদিকে মধ্য মাদার্শা গ্রামে সাজ্জাদের বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনশান-নিস্তব্ধ, সাজ্জাদের বাড়িতে তালা মারা। পাশের ঘর থেকে তার চাচা আবুল কাশেম এসে কথা বলেন।
সাজ্জাদের চাচা বলেন, আমার ভাই প্রায় দেড় বছর রোগে ভুগে ২০১৫ সালের শেষের দিকে মারা গেছেন। এরপর ভাইয়ের পরিবার এখানে ছিল। এসএসসি পাশের পর সাজ্জাদ তার মা-বোনসহ নানার বাড়ি চলে যায়। সে নিয়মিত বাড়িতে আসতো, মৃত্যুর আগের শুক্রবারও বাড়ি এসে অসুস্থ বৃদ্ধ দাদাকে দেখে যায়। তার বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করেছি। দাদা আব্দুল খালেক শয্যাশায়ী। তিনি এখনও জানেন না তার নাতি আর বেঁচে নেই।
দাদী বৃদ্ধা সুরমা বেগম জানান, ছেলে মারা গেছে ৭ বছর হয়েছে। এখানে মেট্রিক পাস করে নাতি তার মায়ের ইচ্ছাতেই নানার বাড়ি চলে গেছে। আমরা সবাই মিলে মেট্রিক পাস করিয়েছি। তার বাবার আশা পূরণ করেছি। বাবার সেই আশা পূরণ হলো সত্যি, কিন্তু সেই সাজ্জাদ এখন আর নেই। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো বাবার কাছে।