মায়ের বুকে থেকেই চিকিৎসা পাবে নবজাতক

দেশের প্রথম ৩০ শয্যার কেএমসি ইউনিটের যাত্রা শুরু আজ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৭ মার্চ, ২০২২ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

স্থাপনের কাজ শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে (স্ক্যানু) ৩০ শয্যার ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) ইউনিটের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। বিশেষ এই ইউনিটে সেবা চালুর ফলে এখানে মায়ের বুকে থেকেই চিকিৎসার সুযোগ পাবে অসুস্থ শিশুরা। এতদিন মায়ের কাছ থেকে আলাদা রেখে স্ক্যানুর ভিতরে নবজাতককে চিকিৎসা দেয়া হতো। আর মায়েদের অপেক্ষায় থাকতে হতো বাইরে। নির্দিষ্ট সময় পর পর ডাক এলে ভিতরে গিয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগটুকু পেতেন মায়েরা। তবে কেএমসি ইউনিট চালুর ফলে এখন থেকে মায়েরা সন্তানদের বুকে রাখার সুযোগ পাবেন বলে জানান চমেক হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ।
১৭ মার্চ (আজ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিশেষ ইউনিট হিসেবে কেএমসির সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জাতীয় শিশু দিবসে শিশু রোগীদের জন্য এটি ‘বিশেষ উপহার’ হিসেবে দেখছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। হাসপাতাল পরিচালক বলেন, শিশু রোগীদের জন্য বিশেষ এ ইউনিট উদ্বোধনে আমরা বিশেষ দিনটি (জাতীয় শিশু দিবস) বেছে নিয়েছি। এর চেয়ে শুভ দিন আর হতে পারে বলে আমরা মনে করি না।

ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারে ২৫টি শয্যা ও ৫টি চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে অনেকটা ক্যাঙ্গারুর মতো সন্তানকে বুকে আগলে থাকতে পারবেন মায়েরা। ক্যাঙ্গারুর মতো সন্তানকে বুকে আগলে রাখা যায় বলেই এটিকে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) বলা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে ৫ থেকে ১০টি শয্যা ও চেয়ারে কেএমসি সেবা চালু থাকলেও ৩০ শয্যার আলাদা কেএমসি ইউনিট কোথাও নেই। সে হিসেবে চমেক হাসপাতালের ৩০ শয্যার এই ইউনিটই দেশের প্রথম আলাদা কেএমসি ইউনিট বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানও এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, জন্মের পরপর বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতকের চিকিৎসায় যেন ভরসার অপর নাম চমেক হাসপাতালের এ নবজাতক ওয়ার্ড। যদিও এটি স্ক্যানু (স্পেশাল কেয়ার নিউনেটাল ইউনিট) হিসেবেই পরিচিত। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর নবজাতকের চিকিৎসায় এটিই একমাত্র ভরসাস্থল। যার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতককে নিয়ে এখানে ছুটে আসেন মা-বাবারা। এক দিনের বয়স থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুদের বিশেষ এ ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হয় জানিয়ে নবজাতক ওয়ার্ডের (৩২নং) সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহীন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সৈয়দা হুমায়দা হাসান বলেন, বিশেষ করে জন্মের পরপর শ্বাস নিতে না পারা বা কান্না না করা, জীবাণুর সংক্রমণ (ইনফেকশন) এবং অপরিণত ও স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা নবজাতকদের এ ইউনিটে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
নবজাতক ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা মাত্র ৩২টি। তবে স্থানীয়ভাবে বৃদ্ধি করে ২য় দফায় এর শয্যা সংখ্যা ৫৬টি করা হয়। পরে আবারো বাড়িয়ে একশটি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশের প্রচেষ্টায় এই শয্যা সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে একশটি শয্যায় এখানে নবজাতক ভর্তি করা হয়। তবে একশটি শয্যাতেই প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ নবজাতক ভর্তি থাকে এখানে। শয্যা সংকটে এক শয্যায় একাধিক শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। পার্বত্য অঞ্চল ও কক্সবাজার নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ কুমিল্লা অঞ্চলের মা-বাবাদের কাছেও নবজাতকদের চিকিৎসায় এই স্ক্যানু একমাত্র ভরসাস্থল বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে গরীব পরিবারের শিশুদের জন্য এই স্ক্যানু আশীর্বাদ স্বরূপ মন্তব্য করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার এ ওয়ার্ডে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন ওয়ার্ডের সামনে সব মায়েরা জড়ো হয়ে থাকেন। এই কেএমসি ইউনিট চালুর ফলে সে ভিড় কমে আসবে বলে আমরা আশা করি। কারণ, ওই অংশে অন্তত ৩০ জন মা তার সন্তানসহ থাকতে পারবেন।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা নবজাতকের ৭২ শতাংশই শহরের বাইরের বা দূর অঞ্চলের। আর চমেক হাসপাতালে জন্ম নেয়ার পরপর চিকিৎসার জন্য এই ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ। বাকি ৬৬ শতাংশ শিশুই চমেক হাসপাতালের বাইরে জন্ম নেয়া। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বলে জানান ওয়ার্ডের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সৈয়দা হুমায়দা হাসান।
চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শিশুদের এখানে নিয়ে আসার কারণ হিসেবে ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, স্ক্যানুতে বিশেষ কেয়ারের মাধ্যমে নবজাতকদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সরাই এই সেবা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া নবজাতকদের জন্য এখানে এনআইসিইউ সুবিধা রয়েছে। রয়েছে কৃত্রিম শ্বাস প্রদানের সুবিধাও। অনেকটা বিনা খরচেই এখানকার রোগীরা এসব সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো এই সুবিধা পাওয়া যায় না। এমনকি শহরের অনেক হাসপাতালেও এসব সুবিধা নেই। তবে প্রাইভেট কিছু হাসপাতালে এই সুবিধা থাকলেও সব পরিবারের পক্ষে এর খরচ বহন করা সম্ভব না। যার কারণে এটি (স্ক্যানু) গরীব পরিবারের শিশুদের চিকিৎসায় ভরসাস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে। চমেক হাসপাতালের স্ক্যানুতেই শয্যা সংখ্যা সবচেয়ে বেশি জানিয়ে বিভাগীয় প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ক্যানুতে ৩২টি এবং মিটফোর্ডে ২৮টি শয্যা আছে। সে হিসেবে আমাদের এখানেই শয্যা সংখ্যা বেশি (একশটি)। তবে রোগীর চাপও বেশি। আর রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণেই একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে বরাতে পটকা-আতশবাজিতে সিএমপির নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী নিবন্ধহজযাত্রীদের সৌদির ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই, আশ্বাস মন্ত্রীর